বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত কারাগারে

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব। 

এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীর কাছে রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন ও জামিন আবেদনের যথাযথ নথি না থাকায় আগামীকাল রিমান্ড শুনানির তারিখ ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ. মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এফএভিপি ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখার অপারেশন ম্যানেজার ইকবাল হোসেন ও ব্যাংকটির এসইভিপি, অডিট এন্ড ইনপেকশন ডিপার্টমেন্ট, ও সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে আসামি শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ইউএস ডলার ঘুস গ্রহণ করে এবং ভুয়া পণ্য বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানির কৌশলে ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার ৮২০ টাকাসহ ৩ কোটি ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার বা ৩ কোটি ৬ লাখ ২৭ হাজার ২৪০ টাকা অবৈধ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনার সুযোগ করে দেওয়ায় মানিলন্ডারিং ধারায় অভিযোগা আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৫-এ, ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিএসইসির দায়িত্বে থাকার সময় শেয়ারবাজারে লুটপাটে সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি সরকার শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামসহ বিএসইসির সাবেক ও বর্তমান ৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল করে। পাশাপাশি এই ৯ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পাসপোর্ট বাতিল হওয়া অন্যরা হলেন- বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম, সাইফুর রহমান, রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুব-উর-রহমান, মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মো. লুৎফুল কবির ও যুগ্ম পরিচালক মো. রশীদুল আলম।

উল্লিখিত ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিএসইসির দায়িত্বে থাকার সময় শেয়ারবাজারে লুটপাটে সহায়তা করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

শিবলী রুবাইয়াতের বিদেশযাত্রায় গত ৯ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ নিষেধাজ্ঞা দেন। এ ছাড়া শিবলী রুবাইয়াত ও তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ আছে। অভিযোগের মধ্যে আছে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়াতে তিনি কারসাজিকারকদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। তাঁর প্রশ্রয়ে শেয়ারবাজারে একটি চক্র গড়ে ওঠে। এই চক্র শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটে নানাভাবে তাঁর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা পেত।

এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে বিদেশি রোড শো করার কারণে শিবলী রুবাইয়াত ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত ২০২০ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। চার বছর দায়িত্ব পালনের পর পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত বছরের ১৬ মে তিনি আবার বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১০ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন শিবলী রুবাইয়াত। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে ফিরে যান। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *