সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ থেকেই গাজীপুর এলাকাসহ সারা দেশে এই অভিযান শুরু হবে বলে জানানো হয়।

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় গাজীপুরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে’ যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার থেকেই গাজীপুরসহ সারাদেশে এই অভিযান শুরু হবে।

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ এর ব্যাপারে আগামীকাল রোববার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশে মহাপরিদর্শক, র‍্যাব, বিজিবি, আনসার, এসবি, সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল রাত ১০টার দিকে গাজীপুর মহানগরের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। গুরুতর আহত কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

এর প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে শহরের ভাওয়াল রাজবাড়ী সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। 

সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, অ্যাডভোকেট সাকিব, কেন্দ্রীয় সদস্য এম সোয়াইব, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান।

গত রাতের এই হামলার প্রতিবাদে আজ দুপুরে  গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ী মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই সমাবেশে যোগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে কারাগারে না পাঠানো পর্যন্ত রাজপথে অবস্থানের ঘোষণা দেন। 

সারজিস আলম বলেন, খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের যোদ্ধাদের হুমকি দিচ্ছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ইন্টেলিজেন্স যদি আজকে রাতের মধ্যে গতকালকের হামলায় জড়িত খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে না পারে তাহলে আমাদেরকে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কোথাও আমাদের কোনো সহযোদ্ধার গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো বাংলাদেশ আবার নতুন করে জেগে উঠবে। আমরা প্রয়োজনে যেমন ঢাকায় নামতে পারি, যেমন গাজীপুরে আসতে পারি, আমরা প্রয়োজনে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় যেতে পারি। আমরা অভ্যুত্থানে দেখিয়েছি, এদেশের ছাত্র-জনতা সঠিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে  ধৈর্য ধরেছে।  কিন্তু একটা ধৈর্যের বাঁধ আছে। এই দেশে প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা কাজ করছে তারা যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলে তাহলে দেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব দেখতে হবে। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *