সুদহার অপরিবর্তিত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

নীতি সুদহার অপরিবর্তিতত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। 

আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আগের মতোই ৯ দশমিক ৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। অবশ্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশ নামিয়ে আনা হবে। সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে যা হয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আছেন ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, জাকির হোসেন চৌধুরী, ড. কবির আহমেদ ও বিএফআইইউ প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।

মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বাড়ানোর আলোচনা থাকলেও জানুয়ারির মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় আপাতত তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বিনিময় হার ব্যবস্থায়ও বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

মূল্যস্ফীতি কমানোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে সরকার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে। আগের মাস শেষে যা ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছিল। যে কারণে আপাতত নীতি সুদহার আর বাড়ানো হয়নি। শিগগিরই কমানোও হবে না। আবার গত ডিসেম্বর মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ভারসাম্যে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে।

চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির কারণে ডলারের দরও ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় স্থিতিশীল আছে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপতত বড় কোনো পরিবর্তন আনেনি। মূল্যস্ফীতি আরও কমতে শুরু করলে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ধীরে ধীরে নীতি সুদহার কমিয়ে আনা হবে। এর আগ পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত থাকবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।

নতুন মুদ্রানীতিতে আরও বলা হয়েছে, নীতি সুদহার করিডরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) বিদ্যমান সুদহার ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং নিচের সীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটির (এসডিএফ) হার ৮ দশমিক ৫০ শতাংশে বহাল রাখা হয়েছে।

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের কঠোর আর্থিক নীতি পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। তবে এসব নীতির কারণে গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এতে করে নভেম্বরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, কঠোর নীতির ধারাবাহিকতা ও অংশীজনদের সহযোগিতায় নিকট ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে।

মুদ্রানীতির বিবৃতি অনুসারে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *