■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এরমধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। তিনি আরও বলেন, ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলার তালিকা করা হয়েছে। তালিকার পর প্রতিটি মামলার রেকর্ড ঘেঁটে আমাদেরকে দেখতে হয়, এটা জেনুইনলি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা কিনা; নাকি এটা কোনোরকম অনিয়ম বা কারচুপি করে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির মামলা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির হত্যা মামলাতো প্রত্যাহার করতে পারি না। প্রতিটা কেস রেকর্ড দেখে-দেখে নিশ্চিত হতে হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলার মধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। আর এক হাজার ২১৪টি মামলার মধ্যে ৫৩টি মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত গেজেট আজ-কালকের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে।
মামলা প্রত্যাহারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা করেছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আমরা ওনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছি।
বিগত সরকারের আমলে কথা বলা বা লেখালেখির কারণে ৩৯৬টি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আইন মন্ত্রণালয় পাবলিক পসিকিউটরদের মাধ্যমে এরই মধ্যে ৩৩২টি মামলা প্রত্যাহার করেছে। ৬১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটাও আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ফেব্রুয়ারি মাস যখন শেষ হবে, তখন স্পিস অফেন্স সংক্রান্ত আর কোনো মামলা সাইবার সিকিউরিটি আদালতে থাকবে না।
তিনি বলেন, তবে তিনটি মামলা আমরা প্রত্যাহার করতে পারবো না। কারণ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেগুলো স্থগিত রয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, ২০১৫ সালের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা নিয়ে প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করত। এই বিধিমালা অনুযায়ী কেউ যদি পাওয়ার দিতে চাইতো; তবে তার পাসপোর্ট থাকতে হতো, বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হতো। প্রবাসীদের সন্তানরা অনেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। তাই তাদের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে গেলে অনেক জটিলতা হতো।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলে আমরা এই বিধিমালার সংশোধন এনেছি। সংশোধন অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট না-ও থাকে, তাহলেও তারা তাদের পাওয়ার অব এটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার থাকলে, কিংবা তার জন্ম সনদ থাকলে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন। আমি মনে করি এটি আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের ভোগান্তি লাঘবে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মামলা ও তদন্তের গতি যাতে ধীর না হয় এজন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
হাসিনাসহ অন্য আসামিদের ৩-৪টি মামলার রায় অক্টোবরের মধ্যে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের ৩-৪টি মামলার রায় অক্টোবরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, আমাদের প্রসিকিউশন টিম যাচাই-বাছাই করে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে। এসব মামলার মধ্যে চারটি তদন্তকাজ এ মাসের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর চার্জশিট গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার কাজ শুরু হবে।
মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে তার নিজ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি তুলে ধরে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, সেই বিচারের অগ্রগতি কী হয়েছে সেটা জানতে চান অনেকে। একটা কমন অভিযোগ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জুলাই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত যে মামলাগুলো সেই মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ধরনের অসন্তুষ্টির কথা অনেকে বলেন। আমরা উনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে এ আদালতে বিচারের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে চার মাস আগে। এরমধ্যে আদালতে ৩০০টির বেশি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেখান থেকে মামলা যাচাই-বাছাই করে অগ্রগতি করা হচ্ছে।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, আইন অনুযায়ী বিচারকাজ শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহ সময় প্রস্তুতির জন্য ডিফেন্স আইনজীবীদের দিতে হয়। আমরা আশা করছি, এই তিন সপ্তাহ সময় অতিবাহিত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষ্যগ্রহণের যে প্রক্রিয়া, যেটা আপনারা খুব ঘন ঘন দেখবেন। এই সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়াটা শুরু হবে ঈদের পরপর এপ্রিল মাস থেকে।
তিনি বলেন, আদালতে অব্যাহতভাবে শুনানি হয় বলে সব মামলার রায় পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে শুরু করে পরবর্তী চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে প্রদান করা যাবে বলে আশা করি। সেই হিসাবে অক্টোবরের মধ্যে তিন-চারটি মামলার রায় পেতে যাচ্ছি বলে আশা করি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, এ সমস্ত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ, শীর্ষস্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসামি হিসেবে রয়েছেন।
তিনি বলেন, যদি পুরো বিচারকার্যটা ধরি, পুরো বিচারকার্যটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এক বছরের মতো সময় লাগছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে শেখ হাসিনার আমলে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির একজন নেতার বিচার হয় সেই বিচারকাজ শেষ করতে গড়ে কমপক্ষে আড়াই বছর লেগেছিল। এখানে আমাদের এই আদালতে অর্ধেকেরও কম সময় লাগছে।
সময় কম লাগার কারণ তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের প্রসিকিউশন টিম, তদন্ত টিম প্রচন্ড নিষ্ঠার সঙ্গে দিনরাত কাজ করছেন। নিয়মিত খবর রাখছি। এ বিচারকার্যগুলো আরেকটু তাড়াতাড়ি হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, বিচারগুলো হয়েছিল অনেক দিনের আগের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে। এখন যে বিচার হচ্ছে, এটার সাক্ষ্য প্রমাণ এত বেশি আছে, যে কারণে আমরা আশা করছি এক বছরের মধ্যেই আমরা প্রথম কয়েকটি রায় পাব।
আগামী দুএকদিনের মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন পাওয়া যাবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি এই রিপোর্টের ব্যাপারে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলব না। তবে একটা জিনিস বলে রাখি, তাদের এই রিপোর্ট আমাদের তদন্ত কাজটাকে, বিচারকাজটাকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পাশাপাশি স্বচ্ছ ও সহজ করতে অনেক অবদান রাখবে।’