■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইড ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এই তহবিল বাংলাদেশের এমন একটি ফার্ম পেয়েছে, যেখানে মাত্র দু’জন কর্মী কাজ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালীকরণের নামে এই তহবিল দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিতে গভর্নরদের নিয়ে আয়োজিত গভর্নর ওয়ার্কিং সেশনস অনুষ্ঠানে এই তথ্য প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জানায়, বাংলাদেশের জন্য ইউএসএইডের এই সহায়তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কারা বা কে এই সহায়তা পেয়েছে সেটি স্পষ্ট করা হয়নি। একই দিন ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য নির্ধারিত ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের কর্মসূচিসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আর্থিক সহায়তা স্থগিত করে ডিওজি।
ভারতের ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে ইউএসএইডের ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল নিয়ে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে দেশটিতে তুমুল বিতর্ক চলছে। দেশটির সরকার ও বিরোধীরা ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। শনিবার ভারতের ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে ভারতে ইউএসএইডের তহবিল নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ইউএসএইডের তহবিলের বিভিন্ন রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখার দাবি করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ভারতীয় এই দৈনিক বলেছে, ভারতে নয়, বরং ২০২২ সালে ওই অর্থ বাংলাদেশে অনুমোদন দিয়েছিল ইউএসএইড। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ফ্যাক্টচেকে ওই ২ কোটি ১০ ডলার তহবিলের মধ্যে অন্তত এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ডিওজিইর তালিকায় ইউএসএইডের দু’টি অনুদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল; যা সিইপিপিএসের (কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রোসেস স্টেনদেনিং) মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কার, গণতন্ত্র-সুশাসন ব্যবস্থার প্রচারে বিশেষভাবে কাজ করে সিইপিপিএস। ইউএসএইডের মাধ্যমে মোট ৪৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাওয়ার কথা ছিল সিইপিপিএসের।
ডিওজিইর মতে, এই তহবিলে ভারতে ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করার কর্মসূচির জন্য ২ কোটি ১০ ডলার ও মলদোভায় ‘অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার’ জন্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বরাদ্দও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ওই তহবিল ছিল জানিয়ে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অনুদান নির্দিষ্ট দেশগুলোতে দেওয়া হয় এবং ২০০৮ সাল থেকে ভারতে ইউএসএইডের অর্থায়নে সিইপিপিএসের কোনও প্রকল্প পরিচালিত হয়নি। ২ কোটি ১০ লাখ ডলার তহবিলের সাথে ইউএসএইডের অনুমোদিত অনুদান কেবল সিইপিপিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশে দেওয়া হয়েছিল; যার ফেডারেল অ্যাওয়ার্ড নম্বর ৭২০৩৮৮২২এলএ০০০০১। ২০২২ সালের জুলাইয়ে ‘আমার ভোট আমার’ নামে একটি প্রকল্পের জন্য যা অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই বছরের নভেম্বরে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘নাগরিক (সিটিজেন) প্রোগ্রাম।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউএসএইডের ঢাকার উপদেষ্টা লুবাইন মাসুম যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে নাগরিক প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদান পাওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন। এই অনুদানের মধ্যে ইতোমধ্যে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার প্রকল্পের পেছনে ব্যয় হয়েছে। তিনটি সংস্থাকে ছয়বারে এই অনুদান সরবরাহ করা হয়েছে। অনুদান পাওয়া তিন সংস্থা হলো ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস), ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)।
এই তিন সংস্থার মধ্যে আইএফইএসের প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে। এছাড়া আইআরআই ও এনডিআইয়ের সদরদপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে। এই অনুদানের বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে আইএফইএসের একজন মুখপাত্র অস্বীকৃতি জানান। পাশাপাশি আইআরআই ও এনডিআইয়ের মন্তব্য জানতে চেয়েও কোনও সাড়া পায়নি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
ইউএসএইডের তহবিল বাংলাদেশে কারা পেয়েছেন, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আইনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। মাইক্রো গভর্ন্যান্স রিসার্চ (এমজিআর) নামের একটি গবেষণা সংস্থার পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, হ্যালো বাংলাদেশ ২.০! গত দুই বছরে এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণদের জন্য ৫৪৪টি অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। কর্মশালার আকারে, প্রশিক্ষণ, কথোপকথন, সামিট, অ্যাকশন প্রকল্পসহ তরুণ গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং নাগরিক সংশ্লিষ্টতার জন্য সরাসরি ২২১টি অ্যাকশন প্রকল্প, ১৭০টি গণতন্ত্র সেশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার ২৬৪ তরুণের কাছে পৌঁছেছিল এমজিআর, সেইভ ইয়ুথ ও ডিএফটিপি!
এসব কর্মসূচির বাস্তবায়ন নাগরিক প্রোগ্রামের আওতায় ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমস (আইএফইএস) এবং ইউএসএইড বাংলাদেশের উদার সমর্থন ও অংশীদারত্বে সম্ভব হয়েছে বলে লেখেন তিনি।
আইনুল ইসলাম ইসলাম আইএফইএসের সিনিয়র কনসালটেন্টের দায়িত্বেও রয়েছেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত অ্যাপ্লাইড ডেমোক্রেসি ল্যাবের (এডিএল) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হন তিনি। ইউএসএইড ও আইএফইএসের সহায়তায় এই ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনুল ইসলাম।
তবে সিইপিপিএসের মাধ্যমে নাগরিক প্রোগ্রামে ইউএসএইডের অর্থায়নের তথ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিশ্চিত করেছেন তিনি। ইলন মাস্ক নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি ইউএসএইডের তহবিল বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটি একটি ধাক্কা। তবে ল্যাবটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এবং আমরা আশাবাদী এটি চালু থাকবে।’’
এদিকে, ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ (এসপিএল)’ শীর্ষক যে প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের অর্থায়নের কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই নামে বাংলাদেশে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল (ডিআই)। তাদের ওয়েবসাইটে এই প্রকল্পে ইউএসএইডের অর্থায়নের তথ্য উল্লেখ রয়েছে। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে ডিআইয়ের এই প্রকল্প।