কখনো স্লিম হতে গিয়ে বাদ পড়ছে ভিটামিন। তার জেরে কারো মুখে অল্প বয়সেই বলিরেখা। তাহলে ঠিক কী কী ভিটামিন রোজ না নিলেই নয়? প্রেগন্যান্সিতেই বা কোনটা জরুরি? নারীদের কখন কোন ভিটামিন নেয়া আবশ্যিক?
শরীর চাঙ্গা রাখতে যে ১২ ভিটামিনের বিকল্প নেই, দেখে নেয়া যাক কোন ভিটামিন সেগুলো।
১. ভিটামিন এ
‘বিটা ক্যারোটিন’ শরীরে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় ভিটামিন-এ। চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে, ত্বক ভাল রাখতে ও নরম টিস্যুর উৎপাদনে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপ্রিকট, গাজর, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, পিচ, কুমড়ো, লাল লঙ্কা, পালংশাক, টমেটোতে থাকে ভিটামিন-এ।
২. ভিটামিন সি
ভিটামিন সি-তে থাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষত, সংক্রমণ সারাতে কাজ করে। শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে, স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে, মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিলে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি অথবা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মাত্রা শরীরে কমে যেতে থাকে। ব্রকোলি, আঙুর, কিউই, কমলালেবু, আলু, স্ট্রবেরি ও টম্যাটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
৩. ভিটামিন ই
ভিটামিন ই নারীদের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। সানফ্লাওয়ার অয়েল, মার্জারিন, কর্ন অয়েল, কড লিভার অয়েল, পিনাট বাটার, হ্যাজেলনাট ও গমে ভিটামিন ই থাকে।
৪. ভিটামিন কে
বয়স্ক নারীদের হাড় শক্ত রাখতে ও রক্ত জমাট হওয়া আটকাতে ভিটামিন কে ভাল। সয়াবিন অয়েল, ব্রকোলি, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, ফিশ অয়েল ভিটামিন কে সমৃদ্ধ।
৫. ভিটামিন বি ৬
ভিটামিন বি ৬-কে বলা হয় পেরিডক্সিন। নার্ভের কাজ ঠিক রাখতে, শরীরে খাবারকে এনার্জিতে পরিবর্তিত করতে অর্থাৎ মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে এই ভিটামিন প্রয়োজনীয়। নারীদের সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষমতা ঠিক রাখতে, ডিম্বাণু উৎপাদনে কাজ করে এই ভিটামিন। তবে বেশি মাত্রায় এই ভিটামিন শরীরে গেলে ক্ষতিও হয়। মাছ, আলু, অ্যাভোগাডো, কলা, বিনস, মাংস, ওটমিল, দানাশস্য ভিটামিন বি ৬ সমৃদ্ধ।
৬. ভিটামিন বি ১২
শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখার পাশাপাশি, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে এই ভিটামিন জরুরি। চিজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দই থেকে ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। অ্যানিমিয়া থাকলে এবং নিরামিষ ডায়েটে অভ্যস্ত হলে শরীরে এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায়।.
৭. ভিটামিন বি ১
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে কাজ করে। যত বেশি ক্যালোরি শরীরে ঢুকবে এটি বেশি দরকার হয়। যারা বেশি অ্যালকোহল খান তাদের বি ১২-এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায় বিনস, দানাশস্য, যব থেকে।
৮. ভিটামিন বি ২
হেলদি ব্লাড সেল তৈরি করতে, এনার্জি বাড়াতে, হজম শক্তি ঠিক রাখতে, চোখ ও ত্বক ভালো রাখতে দরকার ভিটামিন বি ২ ৷ দুগ্ধ জাতীয় খাবার, মাংস, ডিম, সবুজ সবজি, বাদাম এই ভিটামিন সমৃদ্ধ।
৯. নিয়াসিন
নিয়াসিন হল ভিটামিন বি ৩। হার্টের সমস্যা এড়াতে, রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে, ধমনীতে রক্ত চলাচল, হজমশক্তি ও নার্ভ ফাংশন ঠিক রাখতে দরকার। গাজর, বিনস, সবুজ সবজিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
১০ ভিটামিন ডি
যদিও এটাকে বলা হয় ভিটামিন, কিন্তু এটি কাজ করে হরমোনের মতোই। শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের জোগান দিয়ে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে। যখন শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা যায়, তখন হাড় থেকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস শরীর নেয়। ফলে দেখা যায় হাড় ক্রমশই নরম হতে থাকে৷ যা থেকে হয় অস্টিওপোরোসিস। ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খান ডিম, মাছ। ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস রোদ। তবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বিশেষ করে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১১. ফলিক অ্যাসিড
গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ মস্তিষ্ক ও শিরদাঁড়া তৈরি করতে প্রয়োজন ফলিক অ্যাসিড। কোষে ডিএনএ ও আরএএএ তৈরি করতেও সাহায্য করে এবং ডিএনএ-র পরিবর্তন আটকে ক্যানসার প্রতিরোধ করে। প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে অ্যানিমিয়া রোধ করে এই ভিটামিন। প্রেগন্যান্ট নারীদের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত জরুরি। পালংশাক, সবুজ সবজি, স্ট্রবেরি, রাজমা, কালো বিনস, দানাশস্য, ডিম ও মেটে ফলিক অ্যাসিডযুক্ত।
১২. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল সেই সকল উপাদান, যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে পরে ‘ভিটামিন এ’, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই। শরীরের রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে বয়স ধরে রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকা অনবদ্য। এ ছাড়া যে কোনো ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে বাঁচায়।