■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আবেদনে জয় ও পুতুলের মালিকানাধীন ধানমন্ডির সুধা সদন, টিউলিপের মালিকানাধীন গুলশানের একটি ফ্ল্যাট, রেহানার মালিকানাধীন সেগুনবাগিচার একটি ফ্ল্যাট ও ববির মালিকানাধীন গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট দেখাশোনায় প্রশাসক নিয়োগের অনুমতি চাওয়া হয়।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ-সংশ্লিষ্টরা অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে এসব ব্যাংক হিসাব অবিলম্বে অবরুদ্ধ করা আবশ্যক।
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের এই ১২৪টি অ্যাকাউন্টে থাকা ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য দিয়েছে।
এর পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্লাশ ফান্ড’ এর অস্তিত্বও চিহ্নিত হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ থাকায় গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত।
নিষেধাজ্ঞার আদেশ পাওয়া অন্যান্যরা হলেন- শেখ হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার তিন ছেলেমেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
আবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাটের একটি অভিযোগ দুদকে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ৫ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে।
‘তদন্ত দল জানতে পেরেছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিদেশ পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তাই অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দুদক।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নয়টি প্রকল্প থেকে হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক তদন্ত শুরু করে।
২২ ডিসেম্বর কমিশন হাসিনা এবং জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।
সেইসঙ্গে পূর্বাচল নিউটাউন প্রকল্পের প্লট পেতে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গতকাল শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক।
দুদকের তথ্য বলছে, শেখ হাসিনার ১৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ছয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর বাইরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঁচটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ছাড়া শেখ রেহানা, সায়মা ওয়াজেদ , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, সেন্ট্রাল ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), সূচনা ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, আবু সিদ্দিক মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, শাহিন সিদ্দিক, বুশরা সিদ্দিকের একাধিক ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।