ভেঙ্গে দেওয়া হলো মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

 মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকে ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়‌টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তিনটি ব্যাংকে ৭ জন করে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের স্ব স্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে হবে, তা তারা নির্বাচিত করবেন। আগামীকাল এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

ব্যাংক তিনটি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে। তখন আওয়ামী রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এইচ এন আশিকুর রহমান। এ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবার ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার এখন তাঁদের হাতে। পরিচালকদের অনেকে দেশের বাইরে, ফলে সুশাসন ব্যাহত হচ্ছিল। 

এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আল হারামাইন পারফিউমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান। সরকার বদলের পর তিনিসহ অনেক পরিচালক দেশে ফিরছেন না। 

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এনআরবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন রাশিয়া আওয়ামী লীগের নেতা এস এম পারভেজ তমাল। 

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া আলী হোসেন প্রধানিয়াকে চেয়ারম্যান করা হ‌য়ে‌ছে। তি‌নিসহ সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। ব্যাংকটি‌তে নিয়োগ পাওয়া অন্য পরিচালকরা হ‌লেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর ও আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. নুরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শফিকুর রহমান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ।

মেঘনা ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে উজমা চৌধুরী এবং ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশনের প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ পরিচালক হয়েছেন। তবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে কারও নাম দেওয়া হয়নি। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে এখন নিজেরা ঠিক করবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক হাবিবুর রহমান এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আলি আকতার রিজভীকে। 

এনআরবি ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের মধ্যে ইকবাল আহমেদই ছিলেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক। তাকে সরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে ছিলেন মাহতাবুর রহমান। নতুন পর্ষদে ইকবাল আহমেদ ছাড়া অন্য সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। অন্যদের মধ্যে আছেন– গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মিজানুর রহমান এফসিএ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাতটিই ছিল এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল, আল-আরাফাহ্, আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই করছে বৈশ্বিক দুই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ও কেপিএমজি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত। গত দুই বছরে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থপাচার, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, ডলার ও রিজার্ভ সংকটে ব্যাংক খাতের ক্ষত আরও গভীর হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *