৭ দিনের মধ্যে মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

আগামী সাত দিনের মধ্যে মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ের আইন মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা আজকেই শিশুটির ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাঁর মরদেহ দাফনের জন্য মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হবে হেলিকপ্টারে করে। মরদেহ এবং তার পরিবারের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার যাবেন। তিনি সেখানে দাফন পর্যন্ত থাকবেন।

তিনি বলেন, ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করা হয়ে গেছে, আশা করি আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাব। এরই মধ্যে ১২-১৩ জনের ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। আশা করছি আগামী সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হবে।
 
তিনি আরও বলেন, সরকার কোনো কালক্ষেপণ করেনি। দ্রুত সবাইকে গ্রেফতার করেছে। জিজ্ঞেসবাদ করেছে। ধর্ষণের ঘটনা আন্দোলনের নামে ভিন্ন কিছু করতে চায় কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে।
 
এর আগে, দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর জানিয়েছে, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

আরও জানানো হয়, শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

এ দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম মামলাটির তদন্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত ৫ মার্চ বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। পরে শিশুর মা বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার ৪ আসামি আগে থেকেই পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে ৭ দিন ও বাকি ৩ আসামি- বোনের স্বামী, শাশুড়ি ও ভাসুর প্রত্যেককে ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। সেদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর গত শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএইচের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

শিশুটির চিকিৎসায় সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।

মাগুরার এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনা চলছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে চলছে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *