■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘ইস্টার সানডে’ উপলক্ষ্যে ইউক্রেনে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। সেনাবাহিনীকে স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
পুতিনের এই একতরফা ঘোষণার পর এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
শনিবার বিকালে ক্রেমলিনে রুশ সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে উদ্দেশ করে পুতিন বলেন, ‘মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’র ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এ সময়ে সব সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিচ্ছি’।
পাশাপাশি সতর্কতা হিসেবে পুতিন যোগ করেন, ‘আমরা আশা করি ইউক্রেনও আমাদের অনুসরণ করবে। তবে আমাদের বাহিনীকে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বা শত্রুর উসকানিমূলক আচরণের জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’।
এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর আওতাধীন সব বাহিনীর কমান্ডারদের এই যুদ্ধবিরতির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও জানায়, যদি ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতি মেনে চলে, তাহলে রুশ বাহিনীও তা পালন করবে।
রাশিয়ার এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘায়ন ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র আরও স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা একটা কূটনৈতিক বার্তা পাঠানোর চেষ্টা। তবে ইউক্রেনের পাল্টা প্রতিক্রিয়াই এর বাস্তব ফলাফল নির্ধারণ করবে।
এদিকে, বিশেষ সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে রাশিয়ার ব্যাটলগ্রুপ সেন্টারের ইউনিটগুলো গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১৫ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করেছে। ব্যাটলগ্রুপের মুখপাত্র আলেকজান্ডার সাভচুক এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও শত্রুবাহিনী দুটি ট্যাঙ্ক, তিনটি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, পাঁচটি মোটর যান এবং একটি ফিল্ড আর্টিলারি বন্দুক হারিয়েছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলার নির্দেশ দেন পুতিন। ওইদিন ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা। প্রাথমিক অবস্থায় ইউক্রেনে তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকেছিল রুশ সেনারা। তাদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল করে ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাত করা। তবে এতে ব্যর্থ হয় রুশ সেনারা। পরবর্তীতে তারা ইউক্রেনের দুটি বড় অঞ্চল লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করার দিকে মনোযোগ দেয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে রুশ বাহিনী এ দুটি অঞ্চলের প্রায় পুরোটি দখল করে ফেলেছে।
ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত নতুন কাঠামোর অংশ হিসেবে এই স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে বলে সিএনএন’কে জানিয়েছে বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া এবং সেখান থেকেই দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েনের শুরু। এরপর ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের আরও চারটি অঞ্চল — পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণের খেরসন ও জাপোরিঝিয়া — আংশিকভাবে দখল করে
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে ইউক্রেন এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো প্রস্তাব কিয়েভ গ্রহণ করবে না। চলতি বছরের মার্চ মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, কোনো দখলকৃত ভূখণ্ডকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া তাদের জন্য ‘লাল রেখা’।
তিনি বলেন, এই ভূখণ্ডগুলোর বিষয়টি সম্ভবত শান্তি আলোচনায় সবচেয়ে সংবেদনশীল ও কঠিন ইস্যুগুলোর একটি। আমাদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট সীমারেখা— দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে আমরা স্বীকৃতি দেবো না।
সিএনএন’কে দেওয়া সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত কাঠামোতে যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান সীমারেখা ধরে একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই কাঠামো শেয়ার করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। একইসঙ্গে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে এক টেলিফোন আলাপেও বিষয়টি রাশিয়াকে জানানো হয়।
যদিও ট্রাম্প বহুবার দাবি করেছেন, তিনি একদিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন, বাস্তবে মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টা রাশিয়ার অনমনীয় অবস্থানের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অচল হয়ে পড়েছে। হোয়াইট হাউজেও এ নিয়ে হতাশা বাড়ছে।
গত শুক্রবার রুবিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দিনের মধ্যেই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে। যদিও ট্রাম্প পরে কিছুটা নরম ভাষায় বলেন, রুবিও ঠিকই বলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা সম্ভব হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই, তবে আমরা এটি দ্রুতই শেষ করতে চাই।