■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে দুই ছাত্র উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (২৪ মে) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। তাই আওয়ামী লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি। ফলে এই সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের বিচার অসম্পন্ন থাকলে বিএনপি ক্ষমতা গেলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করবে।
সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে শেষ করে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বিএনপি জানিয়েছে বলেও জানান মোশাররফ।
তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে আলোচনা বিষয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। আমরা যা অনুমান করেছিলাম তার ওপর ভিত্তি করে একটা লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছিলাম। সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। সেই ভিত্তিতে আলোচনা করেছি।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, বরং প্রথম থেকেই এ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি, আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’
এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আশ্বাস তাঁরা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’
সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো কথা হয়নি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তোবা তাঁরা তাঁদের প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করব। এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নেই। তাঁর প্রেস উইং কী বলে, তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া দেব।’
মূলত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয়ের ওপর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি যমুনার সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং তাঁরা একমত হয়েছেন। সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচারব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তাঁদের কোনো দ্বিমত নেই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এই আলোচনাও হয়েছে।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে যমুনার সামনে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও। তিনি বলেন, ‘যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি যে আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের (ঘোষণা) ফলে বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় যান বিএনপির ওই চার নেতা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।