:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঈদুল আজহার ৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে সড়ক-মহাসড়কে, রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৬৭৩ টি দুর্ঘটনায় ৮৩৮ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন এক হাজার ৫৬৫ জন। সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯ টি দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হন। রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় ৪৪০ জন নিহত ও আহত হন ৭৯১ জন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এই ঈদে ১১৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ১৫৭ জনই চালক। এই ১৫৭ চালকের মধ্যে ১২৪ জন নিহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, সংঘঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে- মোট যানবাহনের ২৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস।
সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সর্পোট অ্যালায়েন্সের (শ্রোতা) সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নানা ধরনের উদ্যোগের ফলেও সড়ক দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সড়ক নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম একটি মানবিক বিপর্যয়। আমরা বন্যা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বলি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তেমন কিছু করছি না।
তিনি আরো জানান, রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা, পরিবহন খাতের ভারসাম্যহীন বিস্তার, জনস্বার্থের বিপরীতে গোষ্ঠীর স্বার্থ পরিবহন খাতে এক ধরনের রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়া এবং নাগরিক উদ্যোগগুলোর ও সার্বিকভাবে একটি গতির ঘাটতি রয়েছে বলেই সড়ক দুর্ঘটনা অব্যাহতভাবেই বাড়ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ডিভাইডারবিহীন রাস্তাগুলোতে হয়েছে। আমাদের চালকদের যে আচরণ তাতে কোনো রাস্তায় ডিভাইডার রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে এ উদ্যোগ নিতে হবে। মুখোমুখি সংঘর্ষগুলো এক্ষেত্রে অনেকটাই কমানো যাবে।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো চালকরা এ ঈদের ৫ দিন কিংবা ১০ দিনে পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে না। অসচেতনতা কিংবা মালিকদের চাপে অতিরিক্ত সময়ে গাড়ি চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চালকদের রোস্টারিং তালিকা প্রকাশ কিংবা সরকারের কাছে জমা দেওয়া জরুরি, যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যায়।
সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা মোটরর্সের চিপ অপারেটিং অফিসার মো. শাহ্দাত হোসেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. এম মনিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।