■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ফোনালাপের পর বৃহস্পতিবার রাতভর ইউক্রেনে রেকর্ড ৫৩৯টি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন এবং ১১টি ক্রুদ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রুশ বাহিনী।
গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে এর আগে কখনও এক রাতে এত বেশি সংখ্যক ড্রোন রুশ বাহিনী নিক্ষেপ করেনি। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রুশ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত ড্রানগুলোর মধ্যে ৪৭৬টিকে এয়ার ডিফেন্সের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৬৩টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাজধানী কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক এলাকায় আঘাত হেনেছে এবং সারা রাত ধরে চলা এই হামলায় নিহতের কোনো ঘটনা না ঘটলেও আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।
ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিয়েভের মূল শহর ও উপশহরগুলোর বেশ কিছু এলাকায় কয়েক ডজন বহুতল ভবন আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের অনেকগুলোই আবাসিক ছিল।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সাইবিহা বলেছেন, “শুক্রবার সন্ধ্যার পর ১৩ ঘণ্টা ধরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রুশ বাহিনী। হাজার হাজার মানুষ মেট্রোরেল স্টেশন, ভূগর্ভস্থ পার্কিং লট ও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। শুক্রবার ভোর পর্যন্ত পাওয়া গেছে বিস্ফোরণের আওয়াজ। গতকালের রাতটি কিয়েভের জন্য খুবই ভয়াবহ এবং নির্ঘুম রাত ছিল। এত বাজে রাত এর আগে কখনও কিয়েভের বাসিন্দারা দেখেনি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর একটি আমরা গতকাল রাতে দেখলাম। এখানে উল্লেখ্য যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার ফোনালাপের সংবাদ নিয়ে যখন সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যস্ত— সে সময়েই আমরা প্রথম সাইরেনের শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই হামলার মধ্যে দিয়ে রাশিয়া আরও একবার প্রমাণ করল যে তারা সন্ত্রাস এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়।”
এ ব্যাপরে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গতকাল বৃহস্পতিবার পুতিনকে ফোন করেছিলেন ট্রাম্প। বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘসময় ধরে কথা বলেছেন তারা। পরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে এই ফোনালাপে রাশিয়া-ইউক্রেনের সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ইস্যুটির অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা করেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি।
পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপে কোনো অগ্রগতি হয়নি : ট্রাম্প
রাশিয়া-ইউক্রেন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কথা বলতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোনকল করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দীর্ঘ সময় ধরে তারা ফোনে কথা বলেছেন; কিন্তু যে উদ্দেশে ট্রাম্প পুতিনকে ফোন করেছিলেন— সেই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ইস্যুর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প নিজেই সংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পর হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে ট্রাম্প বলেন, “আমি আজ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ফোন করেছিলাম। ইরানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ফোনে কথা বলেছি এবং আপনারা বুঝতেই পারছেন, আমাদের আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির ইস্যুটিও ছিল।”
“কিন্তু এই ইস্যুতে (ফোনকলে) কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমি এতে খুশি নই।”
এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে এখন পর্যন্ত নিজে কোনো মন্তব্য করেননি পুতিন; তবে তার সহকারী ও অন্যতম মুখপাত্র ইউরি উশাকভ বলেছেন, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপ চলছে— ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ক্রেমলিনে এক ব্রিফিংয়ে উশাকভ এ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন—আমরা এখনও সংঘাতের রাজনৈতিক, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ইস্তাম্বুলে সম্পাদিত মানবিক চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।”
“তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে সংঘাতের শুরুতে রাশিয়া যেসব লক্ষ্য নিয়েছিল— সেসব অবশ্যই পূরণ করা হবে। অর্থাৎ এই সংঘাতের মূলে যেসব কারণ রয়েছে— সেসব সমাধান করতে হবে। যদি না হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি হলেও হয়তো তা স্থায়ী না ও হতে পারে।”
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই এই যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন এই যুদ্ধকে থামানোর পরিবর্তে আরও উসকে দিচ্ছে— এমন সমালোচনাও তিনি করেছেন বেশ কয়েক বার।
২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত থামানোকে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি।
সেই অনুযায়ী চেষ্টাও করে যাচ্ছেন ট্রাম্প। গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত যুদ্ধ থামানোর জন্য পুতিনকে ৬ বার ফোনকল করেছেন তিনি; ইস্তাম্বুলে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে যে সংলাপ শুরু হয়েছে— সেখানেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।