শুদ্ধ রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে এনসিপি

■ মুজতবা খন্দকার ■

হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর আমি খুব করে চেয়েছিলাম। পাঁচ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত দল এনসিপি ভালো করুক। দেশের রাজনীতিতে একটি মাইলফলক ভুমিকা রাখুক। দেশের গনতন্ত্র, স্থিতিশীলতার জন্যও এটা খুবই দরকারী ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার সে আশা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, পলিটিক্স ইজ এ ভালগার আর্টস অব সিজ পাওয়ার। কথাটা একেবারেই নিরেট সত্যি। কথাটা সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুশয্যায় তাঁর বিশ্বস্ত শীষ্য শেখ মুজিবকে বলে গিয়েছিলেন। কিন্ত সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মুজিব সোহরাওয়ার্দীর বিশ্বস্ত অনুচর হলেও কখনো সোহরাওয়ার্দীর দেয়া উপদেশ কিংবা নিষেধ আমলে নেননি।

শেখ মুজিব অনেক ক্ষেত্রেই নিজেকে সোহরাওয়ার্দীর তূলনায় বেশী যোগ্য মনে করতেন। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন অক্সফোর্ডের গ্রাজুয়েট। আর শেখ মুজিব কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের সাধারণ মানের ছাত্র। আর তাই সোহরাওয়ার্দীকে ধারন করা, তার শীষ্য হওয়া সত্ত্বেও তার থেকে শিক্ষা নেয়া মুজিবের কম্ম ছিলোনা। নিজেকে অতি বেশী অহঙ্কারী এবং আত্মগরিমা পেয়ে বসেছিলো বলে, তার নামে দেশ স্বাধীন হলেও নিজের জীবন দেবার পরেও দেশের মানুষের কাছে খলনায়ক হিসেবেই রয়ে গেছেন। তার উত্তরসূরী যাকে রেখে গিয়েছিলেন, সেই নারী তাঁর বাবার যেটুকু সুনাম ছিলো তার সবটুকু খেয়ে দেশকে একটা খোলস বানিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

নবগঠিত দল এনসিপি কি শুদ্ধ রাজনীতি করছে? আমি বলবো করছে না। তারা দল গঠনের পর থেকেই বিনয়ের পরিবর্তে জনগনকে দেখাচ্ছে তারাই দেশের মালিক। তাদের কথাবার্তা, আচরনে এত গরিমা এত অহংকার, সেটা মানুষের চোখে দারুনভাবে পড়েছে। এই জন্য বলি রাজনীতিবিদদের গালি দেয়া সহজ। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা অত সহজ নয়। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিককে বলতে শুনেছেন, দুইশো টাকায় ভোট এদেশে কেনা বেচা হয়? প্রথমে এটা বলেছিলেন ডক্টর ইউনূস। আজ সেটার পুনরাবৃত্তি করলেন এনসিপি নেতারা। বাংলাদেশের মানুষ কতটা রাজনীতি সচেতন, সেটা এনসিপির নেতারা ধারনাও করতে পারবেনা। কারন, তাদের তো রাজনীতির সামান্যতম প্রাথমিক জ্ঞানও নেই। যেমন ইউনূসের নেই। তিনি নোবেল বিজয়ী হতে পারেন, তার বিশ্বব্যাপী তারকা খ্যাতি থাকতে পারে। কিন্তু তিনি রাজনীতিক নন। আর যে কারনে তিনি দেশের জনগনকে দুইশো টাকায় ভোট বিক্রি করে বললে হয়তো তার কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু এনসিপির যাবে। বাংলাদেশের মানুষ এমন অপমান পছন্দ করে না। বরদাস্ত করে না। আচ্ছা, দুইশো টাকার বিনিময়ে যদি তারা তাদের স্বাধীনতা বিক্রি করতেই হতো, তাহলে এই রিকশাওয়ালা কেন সেদিন তাদের স্যালুট দিলো? কেন এত মানুষ জীবন দিলো?

এখানেই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। শিক্ষা হচ্ছে পরিমিতবোধ। দু:খজনক হলেও সত্য যে, সেটা মুজিব কন্যা হাসিনার ছিলো না। তিনি সব সময় নিজেকে উচ্চমার্গের চিন্তা করতেন।

বলছিলাম, এনসিপির কথা। যাদের কথা ছিলো পড়ার টেবিলে, কিংবা বিসিএস বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে মামুলি সরকারী চাকরী করে মা-বাবা পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন গুজরান করা। সেটার পরিবর্তে তারাই এখন ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বিষয়টা কেমন যেন গোলমেলে ব্যাপার।

রাজনীতি নিয়ে অনেকেই উন্নাসিকতা দেখান। অনেকেই বলেন, আই হেইট পলিটিক্স। অনেকে পলিটিশিয়ানদের ঘৃনা করেন। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে এত কথা বলেন তাদের সম্পর্কে এত ঘৃনা পোষেন। কিন্তু দিন শেষে দেশের যেকোন সমস্যা কিন্তু রাজনীতিবিদদের চেয়ে আর কেউ ভালো সমাধান করতে পারে না।

কিন্তু আমি আপনি চাইলেই রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা সরাসরি রাজনীতিবিদ হতে পারব না। এটা সবার কম্মও নয়।

একজন আদর্শ রাজনীতিবিদ হতে গেলে তাকে পড়তে হবে। প্রচুর পড়তে হবে। তার প্রচুর ধৈর্য থাকতে হবে। তাকে দেশের মানুষের প্রতি দরদ থাকতে হবে। দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। বিশ্বস্ত হতে হবে। সর্বোপরি থাকতে হবে সেবার মানসিকতা। রাজনীতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় অনুদান। সেটা বুঝতে হবে। আমি আমার সাংবাদিকতা জীবনে বহু নেতাকে দেখেছি মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও উপদপ্তরে ধর্না দিতে। খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছেন সচিবালয়ে। কাজটা হবার পর তার মুখে তৃপ্তির হাসি আমি দেখেছি। এই যে তিনি সংগ্রাম করছেন, এটা তার ব্যক্তিগত লাভের জন্য না, স্রেফ জনগনের কল্যানের জন্য। আমরা রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বলতে পছন্দ করি। কিন্তু এটা ঢালাও অভিযোগ। প্রকৃত রাজনীতিক কখনো দুর্নীতি করেন না। আমি রাজনীতিবিদদের দায়মুক্তি দিচ্ছি না। তবু বলতে হয়, কেউ কেউ কখনো না কখনো দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। সেটা অন্য গল্প। তবে দেখা যায়, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিজের নেতাকর্মীদের অনুরোধ তাকে বাধ্য হয়ে কুপথে নেয়।

নবগঠিত দল এনসিপি কি শুদ্ধ রাজনীতি করছে? আমি বলবো করছে না। তারা দল গঠনের পর থেকেই বিনয়ের পরিবর্তে জনগনকে দেখাচ্ছে তারাই দেশের মালিক। তাদের কথাবার্তা, আচরনে এত গরিমা এত অহংকার, সেটা মানুষের চোখে দারুনভাবে পড়েছে।

এই জন্য বলি রাজনীতিবিদদের গালি দেয়া সহজ। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা অত সহজ নয়।

বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিককে বলতে শুনেছেন, দুইশ টাকায় ভোট এদেশে কেনা বেচা হয়? প্রথমে এটা বলেছিলেন ডক্টর ইউনূস। আজ সেটার পুনরাবৃত্তি করলেন এনসিপি নেতারা। বাংলাদেশের মানুষ কতটা রাজনীতি সচেতন, সেটা এনসিপির নেতারা ধারনাও করতে পারবেনা। কারন, তাদের তো রাজনীতির সামান্যতম প্রাথমিক জ্ঞানও নেই। যেমন ইউনূসের নেই। তিনি নোবেল বিজয়ী হতে পারেন, তার বিশ্বব্যাপী তারকা খ্যাতি থাকতে পারে। কিন্তু তিনি রাজনীতিক নন। আর যে কারনে তিনি দেশের জনগনকে দুইশো টাকায় ভোট বিক্রি করে বললে হয়তো তার কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু এনসিপির যাবে। বাংলাদেশের মানুষ এমন অপমান পছন্দ করে না। বরদাস্ত করে না। আচ্ছা, দুইশ টাকার বিনিময়ে যদি তারা তাদের স্বাধীনতা বিক্রি করতেই হতো, তাহলে এই রিকশাওয়ালা কেন সেদিন তাদের স্যালুট দিলো? কেন এত মানুষ জীবন দিলো?

এসব দেখে শুনে দেশের জন্য আমার কষ্ট হয়। এদেশের হতভাগা মানুষের জন্য দু:খ হয়। এরা দেশের জন্য আর কত ত্যাগ স্বীকার করবে! যে যায় লঙ্কায়, সেই যদি রাবন হয়!

লেখক: যুগ্ম প্রধান বার্তা সস্পাদক, এনটিভি

mujtobantv@gmail.com

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *