■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জুলাই আন্দোলনের সময় ফেসবুক প্রোফাইলে লাল রঙ সহ চোখে মুখে লাল কাপড় পড়ার পরিকল্পনা কার সেই তথ্য প্রকাশ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। রোববার রাতে এই নিয়ে এক সুদীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।
এই পরিকল্পনা ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ দাবী করে আসলেও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক নিশ্চিত করেলেন সেটি শিবির নেতা ফরহাদ নয় নাছিরের। যেখানে সেই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল আরেক শিবির নেতা সাদিক কায়েমের সঙ্গে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ। তার আগে গেলো বছরের আগস্ট মাসে শোকের মাসের কর্মসূচিতে কালো ব্যাজ ও পতাকা উত্তোলনের কর্মসূচি দেয় আওয়ামী লীগ। সেসময় অভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্র জনতার নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এমন সময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত আসে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করাসহ চোখে মুখে লাল কাপড় বাঁধার। অভ্যুত্থান পরবর্তী ১১ মাস পড় শুরু হয়েছে আলোচনা।
যা নিয়ে এই পরিকল্পনার পেছনের ঘটনা জানিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘চোখে-মুখে লাল কাপড় বাঁধা এবং প্রোফাইল পিকচার লাল করা” কর্মসূচির পেছনের গল্প
জুলাইয়ে আন্দোলনের শেষের দিকের কর্মসূচিগুলা অনেকের সঙ্গে আলাপ আলোচনা কর ঠিক করা হতো। এক্ষেত্রে শিবিরের সাদেক কায়েম এবং ছাত্রদলের রাকিব-নাসির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করতাম। আগের দিন দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় আলোচনা করে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হইতো। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী দিন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেয়। আমাদের কর্মসূচি ঠিক করতে গিয়ে শেষ বিকেলের দিকে নাসির ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়, সরকারের ঘোষিত শোক দিবস এবং কালো ব্যাজ ধারণের বিপরীতে আমাদের লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাবনা দেন তিনি।
রাকিব-নাসির ভাইয়ের সাথে এই বিষয়ে আমাদের একাধিকবার কথা হয়। পরে আমি সাদিক কায়েম ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানাই। তিনি বললেন, আলোচনা করে আমাকে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন দিয়ে সম্মতি দেন। প্রতিদিন কর্মসূচি ফাইনাল করার আগে আমরা চারজন- আমি, মাসউদ, রিফাত, মাহিন আলোচনা করতাম। শিবির এবং ছাত্রদলের সাথে অনেক সময় গ্রুপ কলে মিটিং করে কর্মসূচি ফাইনাল করতাম। তারই ধারাবাহিকতায় ঐদিনও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। রিফাত বললো যে, “শোক দিবসের প্রতিবাদে আমরা কালো কাপড় চোখে মুখে বাঁধতে পারি”। আমি রিফাতকে নাসির ভাইয়ের আইডিয়ার কথা বললাম, লীগ যেহেতু কালো কাপড় দিছে, আমরা এইক্ষেত্রে লাল কাপড় বাঁধতে পারি। মাহিনও একই প্রস্তাব দিল।
পরবর্তীতে গতানুগতিক ধারায় বারবার করে সাদিক ভাই এবং নাসির ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে চোখেমুখে লাল কাপড় বাঁধার কর্মসূচি ফাইনাল করা হলো এবং ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়ার আহবান জানানো হলো। যাদের কাছে লাল কাপড় নেই, তারা যেনো প্রোফাইল “লাল” করে, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সেই সময়ে রিফাত রশিদ দেশবাসীর প্রতি এমন আহবান জানিয়েছিলেন। প্রোফাইল পিকচারের সাথে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে সাদিক ভাই পরামর্শ দেন, পরামর্শের আলোকে তিনি কিছু হ্যাশট্যাগও দিয়ে দেন।’
আব্দুল কাদেরের এমন তথ্য প্রকাশের পর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, আমি সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলাম এটা সত্য। এগুলো নিয়ে ক্রেডিট নেয়ার কিছু নেই। ছাত্রদল ক্রেডিট নেয়ার রাজনীতি করে না। যারা গুপ্ত ছিলো আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের আশ্রয়ে ছিলো তারা এগুলো নিয়ে ক্রেডিটের রাজনীতি করছে।