চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

‘চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি ব্যবসা এবং একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল।’

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যার নেপথ্যে এসব দ্বন্দ্ব ছিল বলে জানিয়েছেন লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ভাঙারি ব্যবসা এবং দোকানে কারা ব্যবসা করবে সেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং যারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তারা একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করেছে। যখন ব্যবসা লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তখনই তারা বিবাদে লিপ্ত হয়। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি বলেন, ‘গত বুধবার বিকেল ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’

তিনি জানান, গত ১১ জুলাই পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাব আলমগীর ও মনির ওরফে ছোট মনির নামের আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উৎঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেফতার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন

পুরান ঢাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে সেচ্ছায় এ জবানবন্দি দেন তিনি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, আসামি তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানাধীন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ঘটনার পরে তাকে বহিষ্কার করে ছাত্রদল।

এর আগে বৃহস্পতিবার রবিনের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা। রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হলে সেচ্ছায় জবানবন্দি দেন আসামি রবিন।

জানা যায়, ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা মামলা অপরটি অস্ত্র মামলা। এর মধ্যে হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনকে ৫ দিন এবং তারেক রহমান রবিনকে অস্ত্র মামলায় ২ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ঘটনার পর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে আটক করে। পরে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা ও একটি অস্ত্র মামলা দায়ের হয়।

এদিকে পাথর নিক্ষেপ করে প্রকাশ্যে সোহাগকে হত্যার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়ে, ভাঙারি ব্যবসা এবং একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *