■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেতন গ্রেড উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। বেতন গ্রেড উন্নীত করতে বছরে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ৩৪১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪০ টাকা।
ডিপিইর পাঠানো প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে অফিস আদেশ জারি করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশনস) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, গতকাল রোববার প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলে রিটকারী ৪৫ জন শিক্ষক ছাড়াও অন্য সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড উন্নীত করা সম্ভব হবে।
কবে নাগাদ এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে—এমন প্রশ্নে কামরুল হাসান বলেন, ‘দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে বলা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।’.
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৫০২টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩২ হাজার ৩৫২ জন। গত ১৯ জুন উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী, ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন বিদ্যমান গ্রেড ১১ থেকে ১০-এ উন্নীত করে অফিস আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ জুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের (প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত) দশম গ্রেডে উন্নীত করতে ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে অফিশিয়াল গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সেদিনই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে। বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন।
প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ৪৫ জন শিক্ষক ১০ম গ্রেড দাবি করে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন (নং-৩২১৪/২০১৮) দায়ের করেন। আদালত রিট আবেদনকারীদের পক্ষে রায় দিলে সরকারের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (নং-৩৫৬৪/২০১৯) করা হয়। পরে সরকারের দাখিল করা সিভিল রিভিউ পিটিশন (নং-১২৪/২০২২) এর শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল আপিল বিভাগ রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনকারীরা ৪, ৮ ও ১২ বছরের সেবা শেষে টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পাবেন না। তবে ভবিষ্যতে এ সুবিধা চালু হলে তারা সেটি পেতে পারেন। রায়ের এ ব্যাখ্যার ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের মধ্যে ১২তম গ্রেডে থাকা একজনকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৮৯ হাজার ১৮০ টাকা। একইভাবে ১১তম গ্রেডে থাকা ৩৪ জনকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করতে লাগবে ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬০ টাকা। এ ছাড়া ৮ম গ্রেডে থাকা দুজন আপাতত অতিরিক্ত কোনো সুবিধা পাবেন না, তবে ভবিষ্যতে তাদের উচ্চ গ্রেড নির্ধারণ হলে বকেয়া ও নিয়মিত বেতনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এই ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য মোট অতিরিক্ত ব্যয় হবে ২২ লাখ ৯৭ হাজার ১৪০ টাকা।
চিঠিতে বলা হয়, কেবল ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের গ্রেড পরিবর্তনে এই ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য ১০ম গ্রেড কার্যকর করা হলে সরকারের বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৩২১ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮০ টাকা।