ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশনের কার্যক্রম শুরু

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন। তিন বছর মেয়াদি এ মিশন চালুর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং জাতিসংঘের পক্ষে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেন।

শুক্রবার (১৮ জুলাই) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও বিকাশের লক্ষ্যে মিশন চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারকটি সই হয়েছে।

গত আগস্ট থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্যালয়টি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মানবাধিকার সংস্কার এগিয়ে নিতে এবং গণপ্রতিবাদের ওপর মারাত্মক দমন-পীড়নের বিষয়ে একটি বিস্তৃত তথ্যানুসন্ধান তদন্ত পরিচালনা করতে কাজ করে যাচ্ছে।

ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর বাংলাদেশের মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়, যা দেশের রূপান্তরের মূল ভিত্তি।

তিনি বলেন, এটি আমার কার্যালয়কে আমাদের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রদত্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আরও ভালোভাবে সহায়তা করতে এবং সরকার, সুশীল সমাজ এবং অন্যদের সঙ্গে সরাসরি স্থানীয়ভাবে আমাদের দক্ষতা ও সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের মৌলিক সংস্কারগুলোতে অংশ নিতে সক্ষম করবে।

নতুন মানবাধিকার মিশনটি সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে, যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণে সহযোগিতা করা যায়। একই সঙ্গে এটি সরকার ও সুশীল সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়’-এর মিশন স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন সেই ১৬টি দেশের তালিকায় যুক্ত হলো, যেখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার মতো দেশগুলিতে ইতোমধ্যে এ ধরনের অফিস রয়েছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব অফিসের মূল লক্ষ্য হলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও উন্নয়ন করা। এছাড়া মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকার, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন স্তরের অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা ও এর আলোকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা।

সরকারের এই উদ্যোগে ‘গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা’ প্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সে সময় ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশে তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেবে না।

এ সংগঠনের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গত ৫ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে ‘হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা’ করেছে।

“এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।”

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *