দগ্ধ আরও দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৩৫ জন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে। এ দুর্ঘটনায় রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫০ জন।

শুক্রবার দগ্ধ চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ১০ বছরের তাসনিম আফরোজা আয়মান মারা গেছেন। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ৯টায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আয়মানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। তিনি জানান, তার শরীরের ৪৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত জাতীয় বার্ণের ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে সন্তানের মৃত্যুতে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন আয়মানের বাবা ইসমাইল হোসেন বাপ্পি। তাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর, পরিবার নিয়ে উত্তরায় থাকতেন। মেয়েকে হারিয়ে পুরো পরিবার বিলাপ করছে। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দিতেও পারছেন না। হাসপাতালের বারান্দায় স্বজনদের আর্তচিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে। 

এছাড়া, ১৩ বছর বয়সী ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুসাব্বির মাকিন চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার বেলা একটা পাঁচ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মুসাব্বিরের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।

তার বাবার নাম মো. মহসিন। তিনি পেশায় স্যানিটারি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মুসাব্বির ছোট ছিল।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে চরম আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন পাঁচজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অন্তত ১৭ জন। 

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ বছরের শিশু আইমানের মৃত্যু হয়। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে যায়। 

ডা. মারুফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন ৬ জন।

তিনি বলেন, চিকিৎসাধীন অনেক শিশুর ৩০ শতাংশের বেশি শরীর পোড়া রয়েছে। এদের শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। আমরা দিন রাত কাজ করছি, সঙ্গে বিদেশি ডাক্তারও যুক্ত হয়েছেন। কিছু শিশুর অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। তাদের মধ্যে অনেককেই দু–একদিনের মধ্যে রিলিজ দেওয়া হতে পারে।

আগুনে পোড়া রোগীর অবস্থা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারেও বলেও জানান ডা. মারুফুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে রক্তের কোনো প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি স্কিন ডোনেশনও তারা আপাতত নিচ্ছেন না। এ ছাড়া অনেকে আর্থিক সাহায্য দিতে চাচ্ছেন, সেটিরও প্রয়োজন নেই। চিকিৎসা সংক্রান্ত সব খরচই সরকার বহন করছে।

আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে চিকিৎসক দল আসার ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের যুগ্ম এ পরিচালক বলেন, ভারত থেকে প্রতিনিধি দল এসেছে। চীন থেকে পাঁচ সদস্য বিশেষজ্ঞ একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার রাতে পৌঁছেছে। সিঙ্গাপুর থেকে মোট ৫ জনের দুটি চিকিৎসক টিম আসবেন। 

ডা. মারুফুল বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছি। অনেক মানুষ ইভেন আমাদের বাংলাদেশের যারা স্পেশালিস্ট আছে, আমেরিকা, ইউকে-তে আছেন তারাও আমাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। আমাদের বার্নে বিশ্বমানের চিকিৎসক রয়েছেন। 

প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানটির চলমান ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের তথ্যের ভিত্তিতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক ও ২ জন অভিভাবক নিহত হয়েছেন।

মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডির ঘটনায় আহতদের মধ্যে এখন ৪০ জন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন (ক্রিটিক্যাল ক্যাটাগরি) ৫ জন রোগী।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন।

তিনি জানান, এ মুহূর্তে ‘সিভিয়ার ক্যাটাগরি’তে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১০ জন। ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরিতে ভর্তি রয়েছেন ২৫ জন। 

ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরির রোগীদের মধ্যে ১০ জন এখন পোস্ট অপারেটিভ পিরিয়ডে রয়েছেন। সেই ২৫ জন রোগীর মধ্যে ১৩ জনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নাসির উদ্দীন বলেন, আমরা আশা করছি, হয়তো আগামীকাল (শনিবার) ৪ থেকে ৫ জনকে ছুটি দিতে পারব। তিনি জানান, আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে থাকা ৬ জন রোগীর মধ্যে ২ জন এখন নিজেরা নিঃশ্বাস নিতে পারছেন।

সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *