■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন বলে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। একইসঙ্গে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনেও ঐকমত্যে এসেছেন দলগুলোর নেতারা। রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ এসব তথ্য জানান।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সনদে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর সীমিত করার প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকেই এসেছে। তবে আমরা আগেই বলেছি, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কমিটি না থাকলে আমরা এটি মানব না। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত বিধান অবশ্যই সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এই শর্ত মানলে ১০ বছরের বিষয়টি এখনই ঘোষণা দিতে পারেন। এটি মূলত আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাবিত।’
দিনের আলোচনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়—বাংলাদেশে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এই কমিশনের মাধ্যমে পুলিশের পেশাদারিত্ব, জবাবদিহিতা ও জনবান্ধবতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে।
আলী রীয়াজ জানান, ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এখন কমিশনের গঠন কাঠামো ও আইনগত দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
এর আগে আলোচনার শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে দলগুলো আলোচনা করে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়। তবে আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা করবে।
এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, পুলিশ কমিশনের বিষয়ে আমরা একমত। গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আলাপ-আলোচনায় একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত হয়েছে। যা পুলিশের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবে।
পুলিশ কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, পুলিশ বাহিনী যেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী হিসেবে আইনসম্মত ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করা হবে কমিশনের অন্যতম লক্ষ্য। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয়পক্ষের অভিযোগ নিষ্পত্তির দায়িত্বও এই কমিশনের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন (যা ‘কমিশন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে) গঠিত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে, যিনি ৭২ বছরের নিচে হবেন। কমিশনের সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ৬২ বছরের নিচে থাকবেন।
কমিশনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়পক্ষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এদের মধ্যে থাকবেন—সংসদে সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (যিনি বিরোধীদল থেকে হবেন) একজন করে প্রতিনিধি। এ ছাড়া একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, যিনি হাইকোর্ট বিভাগে অন্তর্ভুক্ত এবং কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজন মানবাধিকার কর্মী, যিনি কমপক্ষে ১০ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে থাকবেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হতে হবে। কিছু নির্ধারিত সদস্য বাছাইয়ের জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যার সদস্য থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক।
কমিশনের চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করবেন, বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বৈঠকে উপস্থিতি ও অন্যান্য দাপ্তরিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী সম্মানী বা ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যদের দায়িত্ব, ক্ষমতা, জবাবদিহিতা, পদত্যাগ এবং অপসারণের পদ্ধতি একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের নীতিগত ও নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তা অনুমোদিত হবে।