সাংবাদিক তুহিনের ময়নাতদন্ত: শরীরে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন

■ গাজীপুর প্রতিনিধি ■

গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।পুলিশের কাছে ওই প্রতিবেদন জমা দেয় গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ব্যক্তির গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতগুলো আকারে ছোট-বড় হলেও প্রতিটিই সমান, গুরুতর ও গভীর ছিল।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

সোমবার হাসপাতালটির ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএনএম আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ‘তুহিনের গলা, ঘাড়, বুক, পিঠ ও হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপে নয়টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আঘাতগুলো আকারে ছোট-বড় হলেও গুরুতর ও গভীর ছিল।’

গত ৯ আগস্ট এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বলে জানান তিনি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’

পাশাপাশি, সোমবার (১১ আগস্ট) তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাত আসামিকে দুই দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুরে আসামি শাহজালাল আদালতে তুহিনকে হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গাজীপুরের মেট্রোপলিটন আদালত-৩-এর বিচারক ওমর হায়দারের আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। পরে রিমান্ডে থাকা সাতজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দুলাল চন্দ্র দাস জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানায় রিমান্ডে থাকার সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তরা তুহিনকে হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া আসামিদের মধ্য থেকে একজন ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে শনাক্ত করে এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মিজান ওরফে কেটু মিজান ও তার স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি, আল-আমীন, স্বাধীন, মো. শাহজালাল, মো. ফয়সাল হাসান, সুমন ওরফে সাব্বির। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় শহিদুলকে।

সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় তার ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে গত ৮ আগস্ট জিএমপির বাসন থানায় হত্যা মামলা করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় এনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)। পাশাপাশি এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনটি। 

সোমবার সিপিজে’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, তুহিন বাংলা ভাষার দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজিপুর প্রতিনিধি ছিলেন। ৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের একটি এলাকায় তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। দেশীয় অস্ত্রসহ একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে কুপিয়ে হত্যা করে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক গণমাধ্যম ও তার কর্মস্থল। 

এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে সিপিজে’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক বেহ লিহ ইই বলেন, অবিলম্বে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সাংবাদিকরা যেন নির্ভয়ে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।  

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *