■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের কার্যালয় ও বাসভবন থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এ নির্দেশনা কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা ই-মেইলে পাঠানো হয়নি। টেলিফোনে অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে বিষয়টি জানিয়ে পরে অন্য মিশনগুলোতে খবরটি পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে যে অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে- কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি অবিলম্বে সরিয়ে ফেলতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়া প্যাসিফিক, আফ্রিকা ও ইউরোপের একাধিক মিশনের সঙ্গে যোগাযোগে জানা গেছে, এখনো অনেকে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পাননি। তবে অন্তত দুটি মিশনের প্রধান নিশ্চিত করেছেন, তারা সরকারের কাছ থেকে সরাসরি এ ধরনের বার্তা পেয়েছেন।
দূতাবাস সূত্র জানায়, বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাস, হাইকমিশন ও কূটনীতিকদের বাসভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি টানানো ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সেই ছবি তাৎক্ষণিকভাবে নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার বাস্তবায়ন তদারকির জন্য অঞ্চলভিত্তিক একজন করে রাষ্ট্রদূতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নিশ্চিত করবেন যে মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে। এ পদক্ষেপে বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতে আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের ছবি থাকছে না।
বিদেশে কর্মরত একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফোনে আমাদের জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির ছবি সরাতে হবে। এটি লিখিতভাবে আসেনি, তবে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অন্য মিশনগুলোতেও বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার। একই সঙ্গে তদারকির দায়িত্বও থাকবে।’
আরেকজন কূটনীতিক জানান, তাদের অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সরাসরি এ বার্তা দিলেও কাছাকাছি আরেকটি মিশনের মাধ্যমেও বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে কর্মরত আরেক কূটনীতিক বলেন, ‘এমন কোনো বার্তা এখনো আমি পাইনি। তবে হাইকমিশনার পেয়েছেন কি না, তা জানি না।’
রোববার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমানও প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মিশন থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলা হয়।
এর বাইরে যেসব দূতাবাস ও কনস্যুলেটে ছবি ছিল, তা নামানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে তারা বলেছেন, এক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা না দিয়ে শনিবার টেলিফোনে তা নামিয়ে ফেলতে বলা হয়।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি টানানো ছিল একটা রেওয়াজ। এখন ‘কারও ছবি থাকবে না’–সেই নীতির বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
এদিকে বিদেশের মিশনগুলো থেকে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোববার বিকাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাফেতে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি দেখা যায়।
রাষ্ট্রপতির ছবি অপসারণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমিও আপনার মত পত্রিকায় পড়েছি, কিন্তু যেহেতু আমি বিদেশি দূতাবাসে কাজ করি না, সেহেতু বলতে পারছি না যে আসলে প্রেক্ষিতটা কী।”
এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, “এটার সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নাই, সেটা স্পষ্ট। একটা ছবির সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকতে পারে না।”
সরকারি সিদ্ধান্ত হলে তার লিখিত কাগজপত্র থাকত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনায় হলে হত বলা যাবে।”