৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ইসি সচিব আখতার আহমেদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, গাজীপুরের একটি আসন বাড়ানো হয়েছে। আর বাগেরহাটের কমানো হয়েছে। এতে গাজীপুরে ৫ থেকে বেড়ে ৬ সংসদীয় আসন আর বাগেরহাটে ৪টি থেকে কমে ৩টি আসন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন দাবি বা আপত্তি বা সুপারিশ বা মতামত সংবলিত দরখাস্তের তথ্যাদি পর্যালোচনা করে এবং শুনানিকালে উপস্থাপিত তথ্য ও যুক্তিতর্ক বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনী এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জাতীয় সংসদের ৩০০ (তিনশত) আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল।

বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ এর ধারা ৬ এবং ধারা ৮ এর অধীন জাতীয় সংসদের পুনঃনির্ধারিত নির্বাচনী এলাকাসমূহের প্রাথমিক তালিকা প্রজ্ঞাপন নম্বর- ১৭.০০.০০০০.০২৫.২২.০৯০,২৪-৩৪১, তারিখ ৩০ জুলাই ২০২৫/১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ মূলে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এবং উক্ত বিজ্ঞপ্তির অনুচ্ছেদ ৩ এর অধীন পুনঃনির্ধারিত নির্বাচনি এলাকার বিষয়ে দাবি/ আপত্তি/সুপারিশ/ মতামত আহবান করা হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রজ্ঞাপন নম্বর- ১৭.০০,০০০০.০২৫.২২.০৯০,২৪-৩৪১; তারিখ ৩০ জুলাই ২০২৫/১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ এবং প্রজ্ঞাপন নম্বর- ১৭,০০,০০০০.০২৫,২২.০৯০,২৪-৫১০; তারিখ ১৮ আগস্ট ২০২৫/০৩ ভাদ্র ১৪৩২ মূলে নির্ধারিত সময়সূচী মোতাবেক প্রাপ্ত দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত এর উপর কমিশন প্রকাশ্যে শুনানি গ্রহণ করে।

ইসি বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, নির্বাচন কমিশন উক্ত আইনের ধারা ৬ এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী দাবি/আপত্তি/সুপারিশ/মতামত সম্বলিত দরখাস্তগুলোতে তথ্যাবলী পর্যালোচনা করে এবং শুনানিকালে উপস্থাপিত তথ্য ও যুক্তিতর্ক বিবেচনান্তে প্রাথমিক তালিকায় প্রকাশিত নির্বাচনি এলাকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করে এতদসংগে সংযুক্ত তফসিল মোতাবেক জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত সীমানার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করলো।

যে ৪২ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে

পঞ্চগড়-১ (পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলা এবং আটঘরিয়া উপজেলা [বোদা পৌরসভার অংশ বাদে]); পঞ্চগড়-২ (বোদা উপজেলার ইউনিয়নসমূহ, বোদা পৌরসভা এবং দেবীগঞ্জ উপজেলা); রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৯ নম্বর ওয়ার্ড); রংপুর-৩ (রংপুর সদর উপজেলা, ওয়ার্ড নম্বর ১ থেকে ৯ ব্যতীত রংপুর সিটি করপোরেশন এবং রংপুর সেনানিবাস এলাকা); সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মেছড়া, রতনকান্দি, বাগবাটি ও ছোনগাছা ইউনিয়ন); সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাহুলী, শিয়ালকোল, খোকশাবাড়ী, কাওয়াকোলা, কালিয়াহরিপুর ও সয়দাবাদ ইউনিয়ন, সিরাজগঞ্জ পৌরসভা এবং কামারখন্দ উপজেলা); সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলা); সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলা); সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর উপজেলা); শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া উপজেলা এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নসমূহ [সখীপুর থানা: আরশিনগর, কাঁচিকাটা, চরকুমারিয়া, চরভাগা, চরসেনসাস, উত্তর তারাবুনিয়া, দক্ষিণ তারাবুনিয়া, ডিএম খালি ও সখীপুর ইউনিয়ন]); শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলা এবং ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও, নারায়ণপুর, মহিষার ও রামভদ্রপুর ইউনিয়ন এবং ভেদরগঞ্জ পৌরসভা)।

ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ উপজেলার তারানগর, কালাতিয়া, হজরতপুর, রুহিতপুর, শাক্তা, কালিন্দী ও ভাস্তা ইউনিয়ন এবং সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেঁতুলজোড়া, ভার্কুতা ইউনিয়ন); ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাঢ্যা ইউনিয়ন); ঢাকা-৪ (ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৭ ও ৫১ থেকে ৫৪ এবং ৫৮ থেকে ৬১ নম্বর ওয়ার্ড); ঢাকা-৫ (ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬২ থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড); ঢাকা-৭ (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩ থেকে ৩৩, ৩৫, ৩৬, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড); ঢাকা-১০ (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ থেকে ১৮, ২২ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড); ঢাকা-১৪ (ঢাকা উত্তর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড এবং সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন); ঢাকা-১৯ (সাভার উপজেলার শিমুলিয়া, ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, পাথালিয়া ও সাভার ইউনিয়ন, সাভার পৌরসভা এবং সাভার সেনানিবাস এলাকা)।

গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর উপজেলা এবং গাজীপুর সিটির ৭ থেকে ১২ নম্বর ওয়ার্ড); গাজীপুর-২ (গাজীপুর সিটির ১ থেকে ৬ ও ১৩ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন); গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সেনানিবাস); গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড); গাজীপুর-৬ ( গাজীপুর সিটির ৩২ থেকে ৩৯ এবং ৪৩ থেকে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড)।

নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা [নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড]); নারায়ণগঞ্জ-৪ (নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা, এনায়েতপুর, বক্তাবলী, কাশিপুর, কুতুবপুর, গোগনগর ও আলিরটেক ইউনিয়ন); নারায়ণগঞ্জ-৫ (নারায়ণগঞ্জ সিটির ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং বন্দর উপজেলা)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা এবং বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ও চান্দুয়া ইউনিয়ন); ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুর, চম্পানগর, পত্তন, দক্ষিণ সিংগারবিল, বিষ্ণপুর, চর ইসলামপুর, পাহাড়পুর ও হরষপুর ইউনিয়ন); কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা); কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস উপজেলা); কুমিল্লা-৬ (কুমিল্লা আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন, কুমিল্লা সেনানিবাস ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা); কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা)।

নোয়াখালী-১ (চাটখিল উপজেলা এবং সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ, নদনা, চাষীরহাট, বজরা, সোনাপুর, দেওটি ও আমিশাপাড়া ইউনিয়ন এবং সোনাইমুড়ী পৌরসভা); নোয়াখালী-২ (সেনবাগ উপজেলা, সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও, নটেশ্বর ও অম্বরনগর ইউনিয়ন); নোয়াখালী-৪ (সুবর্ণচর উপজেলা এবং নোয়াখালী সদর উপজেলার চরমটুয়া, দাদপুর, নোয়ান্নই, কাদিরহানিফ, বিনোদপুর, নোয়াখালী, ধর্মপুর, এওজবালিয়া, কালাদরাগ, পূর্ব চরমটুয়া ও আন্ডারচর ইউনিয়ন, নোয়াখালী পৌরসভা); নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এবং নোয়াখালী সদর উপজেলার আশ্বদিয়া ও নেয়াজপুর ইউনিয়ন); চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া উপজেলা); চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটির ৩ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড); বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর, মোল্লাহাট ও চিতলমারী উপজেলা); বাগেরহাট-২ (ফকিরহাট, রামপাল ও মোংলা উপজেলা) এবং বাগেরহাট-৩ (কচুয়া, মোরেলগঞ্জ এবং শরণখোলা উপজেলা)।

এর আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশেষায়িত কমিটি কাজ করে। তারপর ৩০০ আসনের সীমানার খসড়া ৩০ জুলাই প্রকাশ করে ইসি। দ্বাদশ সংসদের ২৬১ আসনের সীমানা বহাল রেখে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে নতুন সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়। পরিবর্তনের মধ্যে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়। সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি জানাতে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপর গত ২৪-২৭ আগস্ট টানা চার দিন প্রস্তাবিত নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি ও আবেদনের ওপর শুনানী শেষে আজ তা চূড়ান্ত আকারে প্রকাশ করা হয়।

ইসি সচিব জানান, সর্বমোট আপত্তি এবং সুপারিশ আবেদন এসেছে ১ হাজার ৮৯৩টি। ১০ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ জেলার ৮৪টি আসন সম্পর্কিত ১ হাজার ১৮৫টি আপত্তি এবং ৭০৮টি পরামর্শ বা সুপারিশ পাওয়া গেছে। পক্ষ ও বিপক্ষ উভয় দিক থেকেই মতামত এসেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *