■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর হয়েছেন দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতক দল ভূমজাইথাই পার্টির প্রেসিডেন্ট ৫৮ বছর বয়সী আনুতিন চার্নভিরাকুল। শুক্রবার দেশটির পার্লামেন্টে এমপিদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আনুতিন চার্নভিরাকুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন থাইল্যান্ডের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পিউ থাই পার্টির জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী নেতা চিকাসেম নিতিসিরি। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি আনুতিনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
থাইল্যান্ডের পার্লামেন্ট হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের মোট আসনসংখ্যা ৪৯২। বিজয়ের জন্য কমপক্ষে ২৪৭ জন এমপির ভোট পাওয়া জরুরি ছিল ৫৮ বছর বয়সী আনুতিনের জন্য। ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আনুতিনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩১১ জন এমপি।
আনুতিনের দল ভূমজাইথাই (পৌরাণিক অর্থে ‘থাই হয়ে গর্বিত’) পার্লামেন্টে ৫০০ আসনের মধ্যে মাত্র ৬৯টি আসন পেয়েছে। ফলে তাঁকে সরকার চালাতে হলে বড় দুটি দলের যেকোনো একটির সমর্থন অপরিহার্য। তবে থাই নির্মাণ খাতের বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী বিরোধী দলের যথেষ্ট সমর্থন আদায় করেই এ পদে বসছেন।
ভূমজাইথাই মূলত অরাজনৈতিক ও লেনদেননির্ভর দল হিসেবে পরিচিত। অতীতে দলটি কখনো রক্ষণশীল, সামরিক-সমর্থিত গোষ্ঠীর সঙ্গে, আবার কখনো ফেউ থাইয়ের সঙ্গে জোট করেছে।
নৈতিকতা লঙ্ঘণের অভিযোগে গত ২৯ আগস্ট থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতের রায়ে ক্ষমতা হারান সাবেক প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, যিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাত্র এক বছরের মাথায় পদচ্যুত হন পায়েতংতার্ন।
শুক্রবারের পার্লামেন্ট ভোটের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার স্থলাভিষিক্ত হলেন আনুতিন।
থাইল্যান্ডের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পিউ থাই পার্টি। এই দলের মূল নিয়ন্ত্রণ সিনাওয়াত্রা পরিবারের হাতে। পায়েতংতার্ন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে। গত বছর নির্বাচনের পিউ থাই পার্টির সঙ্গে জোট করেছিল ভূমজাইথাই পার্টি। নির্বাচনে জয়ের পর পায়েতংতার্ন প্রধানমন্ত্রী হন এবং উপ প্রধানমন্ত্রী হন আনুতিন।
তবে গত জুন মাসে বৈরী প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন-এর সঙ্গে পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রার একটি ফোনকল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে তার নেতৃত্বাধীন সরকার। এই ঘটনার জেরেই সাংবিধানিক আদালতের রায়ে পদ হারাতে হয় পায়তংতার্নকে। ফোনকল রেকর্ড ফাঁসের ঘটনাকে ঘিরে গত জুন মাসেই জোট থেকে সরে গিয়েছিল আনুতিনের ভূমজাইথাই পার্টি।
আনুতিন দৃঢ় রাজতন্ত্রপন্থী। অন্যদিকে পিপলস পার্টির নেতৃত্ব রাজতন্ত্রবিরোধী অবস্থানের কারণে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। ফলে তাদের কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। এ ছাড়া এই দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য লেসে মাজেস্তে (রাজতন্ত্র অবমাননা) আইনেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাই অনেকে ভূমজাইথাইয়ের সঙ্গে সমঝোতার বিরোধিতা করেছেন।
এদিকে, পেতংতার্নের বরখাস্তের পর ফেউ থাইয়ে যখন ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অভ্যুত্থানের নেতা প্রায়ুথ চান-ওচাকে আবার দায়িত্বে বসানোর কথা ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু পিপলস পার্টির কাছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। অবশেষে পিপলস পার্টি কিছু কঠিন শর্তে আনুতিনকে সমর্থন দিতে রাজি হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চার মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন এবং সামরিক বাহিনীর খসড়া থেকে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা।
তবে দলটি স্পষ্ট করেছে, তারা কেবল নতুন সরকারের টিকে থাকার জন্য ভোট দেবে, কোনো আইন প্রণয়নের পক্ষে নয়। ফলে আনুতিন শুরুর দিন থেকেই বাঁধা হাত নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন, হাতে আছে মাত্র চার মাস সময়।
আনুতিন ধনী রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা। তাঁর বাবা একাধিক মন্ত্রিত্ব সামলেছেন এবং পারিবারিক নির্মাণ ব্যবসার প্রতিষ্ঠাতা। সেই প্রতিষ্ঠানই নতুন থাইল্যান্ডের নতুন পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ করেছে; যেখানে এবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হলো।
আনুতিন ২০২২ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে থাইল্যান্ডে মারিজুয়ানা আইন শিথিলকরণের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পান। তিনি উড়োজাহাজ চালনায় পারদর্শী। তাঁর নিজের তিনটি বিমান রয়েছে। তবে এবার তাঁর চ্যালেঞ্জ হলো—স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিমজ্জিত দেশটিকে সংকট থেকে বের করে আনা।
আনুতিনের ক্ষমতায় আসা সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালে পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল পরিবারটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডজুড়ে নজর ছিল একটি প্রাইভেট জেটে, যাতে চড়ে থাকসিন দেশ ছেড়েছেন। শুক্রবার ভোরে তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান, চিকিৎসার জন্য দুবাই গেছেন এবং ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজিরার জন্য সময়মতো দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে। ওই মামলায় তাঁর কারাদণ্ডও হতে পারে।
২০২৩ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা ফেউ থাই এখন কার্যত মাঠের বাইরে চলে গেছে। তাদের শেষ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন চাইকাশেম নিতিসিরি। তবে তিনি খুব একটা পরিচিত নন এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ।