নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সহিংসতায় নিহত ২০

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সহিংসতায় প্রাণহানি ২০ জনে পৌঁছেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৪৭ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নেপালের ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসক ডা. দীপেন্দ্র পাণ্ডে বলেছেন, হাসপাতালটিতে সাতজন বিক্ষোভকারীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে আসা আরও ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের প্রত্যেকের মাথা ও বুকে গুলির আঘাত রয়েছে। সেখানে আরও ২০ জনেরও বেশি চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া বানেশ্বরের এভারেস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন বলে সেখানকার কর্মকর্তা অনিল অধিকারী নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে অন্তত ৫০ জন বিক্ষোভকারী আহত অবস্থায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর।

কাঠমান্ডুর সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত দুই বিক্ষোভকারী মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালক মোহন চন্দ্র রেগমি। এছাড়া কেএমসি হাসপাতাল এবং ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হাসপাতালে একজন করে বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও ছাত্র-জনতা পোখারা, বুতোয়াল, ভারতপুর ও ইতাহারিসহ কয়েকটি শহরের রাস্তায় নামে। 

সকালে কাঠমান্ডুর বাণেশ্বর এলাকায় প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা রাজধানীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে।

বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ (জেন-জি) প্রজন্ম। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপকভাবে জলকামান, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গাছের ডাল, পানির বোতল নিয়ে প্রতিরোধে নামে। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী দেশটির সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন।

কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, রাজধানী ছাড়াও বিক্ষোভ আরও কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোতে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুরুতে কাঠমান্ডুর একটি এলাকায় কারফিউ জারি করে সরকার। পরে তা রাজধানীসহ আরও কয়েকটি জেলায় জারি হয়েছে। এসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দেওয়া শুরু করেছেন। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ছাত্র-জনতার জমায়েত বেশি হয়েছিল।

কাঠমান্ডুতে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাস’, ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, রাজপরিবারের প্রধান প্রাসাদ সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসবভন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।

নেপাল সরকারের দাবি, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিষিদ্ধ হওয়া প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন নেয়নি। এ কারণে সরকার এগুলোতে ব্যবহারকারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সরকার যুক্তি দিয়েছে যে, অনলাইনে বিদ্বেষ, গুজব ও সাইবার অপরাধ ঠেকাতে নিবন্ধনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। 

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক নেপালি বিনোদন, খবর ও ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করেন। এমনই একজন ২৫ বছর বয়সী জেনিশা জোশি। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে গয়না ও আনুষাঙ্গিক সামগ্রী বিক্রি করেন। 

জোশি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ। ফেসবুক বন্ধ হলে তাঁর ব্যবসায় ধস নামবে। এ ছাড়া, তার আত্মীয়রা দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সঙ্গে তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সরকারের এটি বন্ধ করা উচিত হয়নি।

দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা সুমনা শ্রীষ্টা বলেন, ‘সরকার স্বাধীন মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।’ কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ইয়ি বলেন, এই পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য এক বিপদজনক নজির। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) এক বিবৃতিতে উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন বলেছে, শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক আইনে নিশ্চিত অধিকার। তবে আন্দোলনকারীদের ভাঙচুর ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ—দুটোকেই ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছে কমিশন।

তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের মূল দাবি—দুর্নীতির অবসান ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। সরকার ২৬টি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও দুর্নীতি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নকে ধ্বংস করছে।

নেপালে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে সহিংসতায় নিহত ২০

কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি

সহিংসতার পর রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া দেশের অন্য প্রধান শহরগুলোতেও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় রাজধানীতে কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়েছে। সরকারিভাবে দুর্নীতি ও সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে জেনারেশন জেড বা জেন জেডের বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রথমে বানেশ্বরের কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিল। কারণ, বিক্ষোভকারীরা সেখানে একটি নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। তবে নতুন সিদ্ধান্তে কারফিউয়ের পরিধি আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। এখন এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন শীতল নিবাস এলাকা, মহারাজগঞ্জ, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিংহ দরবারের চারপাশ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বলুয়াতার ও এর আশপাশের এলাকা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

আন্দোলনে সমর্থন জানালেন তারকারা

একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নামা জেন-জিদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন দেশটির প্রখ্যাত শিল্পী ও বিনোদনজগতের তারকারা। 

কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ এক বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বলেন, বয়সসীমার কারণে (এই আন্দোলনে কেবল ২৮ বছরের নিচেররা অংশ নিতে পারছে) তিনি সরাসরি বিক্ষোভে অংশ নিতে পারছেন না। তবে আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে তিনি সমর্থন করছেন। খবর দ্য কাঠমান্ডু পোস্টের

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে মেয়র বালেন্দ্র বলেন, তরুণদের আন্দোলনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত হবে না।

অভিনেতা মদনকৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ ও হরিবংশ আচার্য ফেসবুকে প্রকাশ্যে বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন। তারা তরুণদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

আচার্য সম্প্রতি একটি বেহাল সড়ক নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রশ্ন তুলে বলেন, করদাতাদের অর্থে নির্মিত অবকাঠামো কেন এত দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

হরিবংশ আচার্য লিখেছেন, ‘আমি প্রতিদিনই দেখে বিস্মিত হতাম, সড়কটি কীভাবে এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। আমি প্রতিদিন এই সড়কে হাঁটতাম, চিন্তা করতাম। তবে আজকের তরুণেরা শুধু চিন্তা করেন না—তারা প্রশ্নও তোলেন। কেন সড়কটি নষ্ট হলো? কীভাবে এটা ঘটল? এর জন্য দায়ী কে? আজকের তরুণ প্রজন্ম যেসব প্রশ্ন তুলছেন, এটি শুধু তার একটি উদাহরণ। আজ আমরা যে কণ্ঠস্বর শুনছি, তা শুধু কোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়; বরং সেসব নেতা ও কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যারা এর জন্য দায়ী।’

এ অভিনেতা নিজেদের কাজের মানোন্নয়ন করতে এবং দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনকার তরুণসমাজ বেশি বেশি জবাবদিহি আশা করে।

গায়ক ও অভিনেতা প্রকাশ সাপুত দুই ভাই সুনীল ও শচীনকে বিক্ষোভে যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত মাসে ইউটিউব থেকে আয় হওয়া অর্থ থেকে দুই ভাইয়ের প্রত্যেকের জন্য ২৫ হাজার রুপি করে পাঠিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে তাদের পানি সরবরাহ করতে ও শরীর আর্দ্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে এবং একসঙ্গে সবকিছু করার চেষ্টা করে নিজেদের ক্লান্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অভিনেত্রী বর্ষা রাউত কাঠমান্ডুর বাইরে থাকলেও টিকটকের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বিক্ষোভে অংশ নিতে অন্যদের উৎসাহিত করেছেন।

অভিনেতা আনমল কে সি, প্রদীপ খদকা, ভোলারাজ সাপকোটা, বর্ষা শিবাকোটি এবং সংগীতশিল্পী এলিনা চৌহান, রচনা রিমাল ও সমীক্ষা অধিকারীও আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সবাইকে এতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সামাজিক মাধ্যমকে দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ, অভিযোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও কমপ্লায়েন্স অফিসার রাখতে হবে। এ নিয়ম না মানায় বড় বড় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে টিকটক, ভাইবার, নিমবাজ ও পোপো লাইভ ইতিমধ্যে নিবন্ধিত হওয়ায় এই প্ল্যাটফর্মগুলো চালু রয়েছে। এ ছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরির আবেদন এখনো প্রক্রিয়াধীন।

বিক্ষোভকারীরা কী বলছে

‘দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট’-এর তথ্যমতে, নেপালে ১ কোটি ৩৫ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ৩৬ লাখ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী রয়েছেন। দেশটির বহু মানুষ তাঁদের ব্যবসা ও কর্মজীবনে সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।

চলমান বিক্ষোভের বিষয়ে ২৪ বছরের ছাত্র ইউজন রাজভাণ্ডারি বলেছেন, ‘শুরুতে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাই আমাদের উত্তেজিত করেছে। তবে এ বিক্ষোভের মূল কারণ দুর্নীতি। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি।’ আরও এক শিক্ষার্থী ইক্ষামা তুমরোক বলেন, ‘সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের অবসান চাই। আমাদের প্রজন্মেই পরিবর্তন আসতে হবে।’

একটি ভিডিওতে এক তরুণের কণ্ঠে শোনা যায়—‘নেতাদের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে, কিন্তু আমাদেরটা কোথায়?’

নেপাল সরকারের অবস্থান

নেপালের সরকার গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং নাগরিকদের সুরক্ষা ও অবাধ ব্যবহারের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এর আগে অনলাইন প্রতারণা ও অর্থ পাচারের অভিযোগে টেলিগ্রাম সাময়িকভাবে ব্লক করা হয়েছিল। গত বছর নিষিদ্ধ হওয়া টিকটক নেপালি বিধিনিষেধ মেনে চলতে রাজি হলে গত আগস্টে পুনরায় চালুর অনুমতি পেয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন নেপালের তরুণ প্রজন্মকে নতুন এক রাজনৈতিক ও সামাজিক মোড়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *