■ ফরিদপুর প্রতিনিধি ■
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়ন ও হামিরদী ইউনিয়ন দুটি নগরকান্দা উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত করায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন স্থানীয়রা। এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সোয়াদী ও মনসুরাবাদ এবং ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী, নওপাড়া ও পুখুরিয়া এলাকায় স্থানীয় লোকজন গাছ কেটে ও বাঁশ ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কটিও অবরোধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে তিনটি মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
অবরোধকারীরা বলেন, ‘১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে ভাঙ্গা উপজেলাবাসী এক আত্মার বন্ধনে একটি পরিবার। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। অতি দ্রুত নির্বাচন কমিশন দুটি ইউনিয়নকে পুনরায় ভাঙ্গার সঙ্গে যুক্ত রাখার দাবি জানাই। আর যতক্ষণ পর্যন্ত এই দাবি বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হবে।’
রাস্তা অবরোধ করার কারণে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের তালমার মোড় থেকে পুকুরিয়া ১২ কিলোমিটার ও ভাঙ্গা দক্ষিণ পাড় থেকে টেকেরহাটের দিকে তিন কিলোমিটার এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মিলিগ্রাম থেকে ভাঙ্গা ছয় কিলোমিটার ও সুয়াদী থেকে জয় বাংলা মোড়ের দিকে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই মহাসড়ক মিলিয়ে অন্তত ২৩ কিলোমিটার যানজটে আটকা পড়েছে যানবাহন। ফলে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অন্তত ১৫ কিলোমিটার এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে অন্তত আট কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘ যানজটে শত শত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি আটকা পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
ফরিদপুর-৪ আসন এত দিন ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। আর ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
অবরোধ চলাকালে এলাকাবাসী স্লোগান দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদ জানান। তাঁরা ‘আমরা ভাঙ্গার মানুষ, ভাঙ্গাতেই থাকতে চাই’, ‘ভাঙ্গা আমার মা, আমার মায়ের বিভাজন হতে দেব না’, ‘নগরকান্দার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেব না’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
অবরোধের পর ভাঙ্গা থানার পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে বিপুলসংখ্যক অবরোধকারীর কারণে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহন আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মহাসড়ক ক্লিয়ার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অবরোধকারীদের বুঝিয়েও কাজ হচ্ছে না। তবে জরুরি যানবাহনগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।’
এর আগে গত শুক্রবার প্রায় সাত ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের পুরোপুরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় অবরোধকারীরা। পরে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় অবরোধ প্রত্যাহার করেন তারা। এর মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
বিএনপির নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুলসহ সাতজনের পক্ষ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন বাতিল না করা হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে। তবে ওই দিন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছিলেন, আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।