বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারসহ ৬ দেশে ভূমিকম্প

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও চীনে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে।

এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের উদলগুরি জেলার ঢেকিয়াজুলিতে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার ভূগর্ভে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটি বেশি গভীরে না হওয়ায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলে তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. ওমর ফারুক জানান, মাঝারি ধরনের এ ভূকম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৮।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, উৎপত্তিস্থলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৯। উৎপত্তিস্থলটি আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে দূরে আসাম ভ্যালি ও হিমালয়ের মাঝামাঝি। এটি মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার ভূমিকম্প।

 জার্মানির ভূতাত্ত্বিক গবেষণা সংস্থা জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) বলছে, রোববার উত্তর-পূর্ব ভারতে ৫.৭১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার (৬.২১ মাইল) ভূগর্ভে।

ভূমিকম্পের সময় আসামের রাজধানী গুয়াহাটির অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেখানকার স্থানীয় এক বাসিন্দা দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল এই কম্পন কখনও থামবে না।’’

আরেক বাসিন্দা বলেন, কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, আমি মারা যাচ্ছি। ভেবেছিলাম সত্যিই ছাদ ভেঙে পড়বে। আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানওয়াল এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, আসামে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। সবার মঙ্গল কামনা করছি।

এর আগে, গত ১১ এপ্রিল বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটের দিকে এ কম্পন অনুভূত হয়। ইউরোপিয়ান-মেডিটেরানিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৬৮ কিলোমিটার উত্তর এবং ভারতের আগরতলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার উত্তরে। এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।

এর আগে ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। যার উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের সাগাইন জেলা থেকে ৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যার গভীরতা ১০ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।  

এর আগে, ৩ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেদিন সকাল ১০টা ৩২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ইউএসজিএস জানায়, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫। যার উৎপত্তিস্থল ছিল  ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের একটি স্থান।

চট্টগ্রামে গত বছরের ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল অক্ষাংশ ২২ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমা ৯৪ দশমিক ১৯ ডিগ্রি পূর্ব মিয়ানমারের মাউলাইকে। রাজধানীর ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এর দূরত্ব ছিল ৪০০ কিলোমিটার।

গত ৫ মে রাজধানীতে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে দোহারে।

গত ৫ জুন ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে বঙ্গোপসাগরে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের কাছে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে।

গত ১৬ জুন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ, মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫।

গত ১৪ আগস্ট সিলেটে ফের ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। একই সঙ্গে ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায়ও এটি অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল আসামের মেঘালয়, গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২২৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে।

২৯ আগস্ট সিলেট মহানগরীর আশপাশে ফের মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৫। উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জৈন্তাপুরে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আসাম রাজ্যে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প আঘাত হানে। আসামে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলাও। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের আসামের কাছাড়ে।

১৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে ৪.২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।

২ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ। ঢাকার আগারগাঁও ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৮৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৬।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *