বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, খোলা হলো সব জলকপাট

■ নীলফামারী প্রতিনিধি ■

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।  পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি অর্থাৎ ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাউবোর ডালিয়া পয়েন্ট ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। দুপুর থেকে তা বাড়তে থাকে। রাত ৯টার দিকে পানির স্তর বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচে পৌঁছায়। ভোরে আরও পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করে।

হঠাৎই পানির চাপ বাড়ায় নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, নদীর পাড়ঘেঁষা নিম্নাঞ্চলের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যেই পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জনপ্রতিনিধিরা আশঙ্কা করছেন, পানি আরও বাড়লে চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবিত হয়ে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাসিন্দারা গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) জানিয়েছে, ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রংপুর বিভাগের প্রধান নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে যেতে পারে। এতে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীপাড়ের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ডিমলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি বেড়েই চলেছে। এখনো ঘরবাড়ি ডুবেনি, কিন্তু মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তার পাড়ের নীলফামারী ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে, এবং চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বাপাউবো পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী তিন দিনে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

১২ জেলায় বন্যার সতর্কবার্তা

দেশের উত্তরাঞ্চলের ১২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী তিনদিনে এসব অঞ্চলের নদীগুলোর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। 

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতেতে বলা হয়, রংপুর বিভাগের ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি সমতলে বাড়তে পারে এবং তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা পার করতে পারে। এ সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে।

একই সঙ্গে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী, যাদুকাটা ও ভোগাই-কংস নদ-নদীগুলোর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের হালদা, সাঙ্গু, মুহুরী, সিলোনিয়া ও ফেনী নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আরও বলেন, আগামী দুদিন দেশের অভ্যন্তরে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। উজান থেকে পানি আসতে পারে। তবে এসব পানি কমে যাবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *