ভাঙ্গায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, উপজেলা পরিষদে হামলা

■ ফরিদপুর প্রতিনিধি ■ 

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুপুরে থানা ও উপজেলা পরিষদে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুর ১২টা ৪৫ থেকে ১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আধা ঘণ্টার মধ্যে এ তাণ্ডব চলে। 

আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩০টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ভাঙা হয়। পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে সাতটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।

অন্যদিকে ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া হয়। থানা প্রাঙ্গণে অন্তত চারটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় থানার ব্যানার ও ভবনের কাচও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকিবুজ্জামান।

ভাঙ্গা থানা ভবনে অবস্থানরত ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিলের বক্তব্য জানতে চেয়েও জানা যায়নি। ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে হামলা-ভাঙচুরের প্রত্যক্ষদর্শী ভাঙ্গা পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদী এলাকার বাসিন্দা ভাঙ্গা বাজার কাপড়ের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মৃধা জানান, থানা ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন রামদা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ঢুকে পড়ে। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, হামলার সময় কাউকে বাধা দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসন থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনে সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা আসনগুলোর পূর্বের অবস্থা বহাল চান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার থেকে টানা তিন দিন মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।

৬ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে খুলনা-বরিশালের যান চলাচল স্বাভাবিক

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় অবরোধ-সহিংসতায় বন্ধ থাকার ছয় ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আটকে থাকা সব যান চলাচল শুরু করে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শামসুল আজম জানান, বিকেলের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। কাজ চলছে।

আজ বেলা ১টা থেকে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। পরে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা গোলচত্বরে অবস্থান নেয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে গোলচত্বরের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় সেখানে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে পুলিশকে বিক্ষুব্ধদের কাউকে বাধা দিতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বেলা ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কয়েক হাজার জনতা লাঠিসোঁটা, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল নিয়ে যোগ দিতে যায়। পরক্ষণেই দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় তারা। এ সময় ১০ থেকে ১২ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদে আশ্রয় নেন। উত্তেজিত জনতার ইটপাটকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় দৌড়াতে দেখা যায় পুলিশ সদস্যদের। পরে কিছু সময় তাঁদের ঘিরে রাখে উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে মাদ্রাসা ও মসজিদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করে।

এরপর সেখান থেকে বিক্ষুব্ধরা থানার দিকে চলে যায়। থানায় থাকা গাড়ি ও থানা ভবনে ভাঙচুর করে। ভেতরে আটকা পড়েন পুলিশ সদস্যরা। পরে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়, আগুন দেওয়া হয় সেখানে থাকা মোটরসাইকেলে। পরে হাইওয়ে অফিস ও পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মাই টিভির ভাঙ্গা উপজেলা প্রতিনিধি সরোয়ার হোসেন।

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা বলেন, ‘আমরা বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচন কমিশনে জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের বলা হয়েছে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে। আমরা দ্রুত প্রতিবেদন দিলে আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে সমাধান হবে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *