একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক বসবে

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে চলতি সপ্তাহে প্রতিটি ব্যাংকে প্রশাসক বসাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ অনুযায়ী পরিচালিত এই একীভূত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে দুই বছর।

এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. আরিফ হোসেন খান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রশাসক হবেন। প্রশাসককে সহায়তা করার জন্য থাকবেন আরও চারজন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা। তাঁরাই ব্যাংকগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়। চলতি সপ্তাহে প্রশাসক বসানোর পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। এমন তথ্যও জানা গেছে।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাঁচটি ব্যাংককে একীভূতকরণের আওতায় আনা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হবে। আর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে ন্যূনতম দুই বছর সময় লাগবে। 

তিনি বলেন, ‘একীভূতকরণ প্রক্রিয়া চলাকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিটি ব্যাংকে একটি করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টিম বা প্রশাসক দল থাকবে। প্রতিটি ব্যাংকের জন্য একটি করে টিম থাকবে, যেখানে ৩ থেকে ৫ জন সদস্য থাকতে পারে। কোনো একক প্রশাসক নিয়োগ হবে না। এই টিম কাউকে প্রতিস্থাপন করবে না; অর্থাৎ বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা অন্য কর্মকর্তারা তাদের স্বপদে বহাল থাকবেন। ব্যাংকের বিদ্যমান ম্যানেজমেন্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো প্রশাসক টিম যৌথভাবে ব্যাংক পরিচালনা করবে।‘’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসক দল কাজ শুরু করলে বিদ্যমান বোর্ডগুলো ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, কিন্তু বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে না। ব্যাংক রেজোলিউশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী যখন কোনো ব্যাংকের একীভূতকরণ চূড়ান্তভাবে শেষ হবে, তখন বোর্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত বোর্ড থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স বাইরে থেকে ব্যাংকগুলোকে তত্ত্বাবধান করবে এবং নীতিগত সহায়তা দেবে।’

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক। যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য শিগগিরই লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য সরকার থেকে ২০ হাজার কোটি মূলধন জোগান দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

কিছুদিন আগে একীভূত করতে ব্যাংক পাঁচটির শুনানি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলোর প্রস্তাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় তা পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, এই পাঁচ ব্যাংকের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারই দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে।

এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি (ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *