■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
সাত দফা দাবিতে রাজধানীর সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এতে সাতরাস্তা মোড়সহ আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা। অবরোধের ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি শিক্ষাকে অবহেলা করা হচ্ছে ও প্রকৌশল কর্মক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদেই তারা রাস্তায় নেমেছেন।
তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার অনীশ কীর্ত্তনীয়া বলেন, “সাতরাস্তার মঝে অবস্থান নেওয়ার কারণে চারদিকের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব আশেপাশে পড়েছে। আমরা যানবাহন ডাইভারশনের চেষ্টা করছি।”
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটি বিশাল মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সাতরাস্তা মোড়ে এসে অবস্থান নেয় এবং সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নিজেদের দাবির পক্ষে স্লোগান দেয়। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল ধীর হয়ে পড়ে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
১. জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় বাতিল এবং সংশ্লিষ্টদের পদবি পরিবর্তন।
২. ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল ও নিয়োগবিধি সংশোধন।
৩. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়স সীমা বাতিল, চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু এবং ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা।
৪. সংরক্ষিত পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় নিম্নপদে নিয়োগ বন্ধ করা।
৫. কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ।
৬. স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়’ ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন এবং উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
৭. নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ।
শিক্ষার্থীরা আরও জানিয়েছেন, নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ডুয়েটের আওতায় একাডেমিক কার্যক্রম চালু করে শতভাগ আসনে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নাফিজ আল রুশদ বলেন, এর আগে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়েছিল। সেগুলো সরকার মেনে নিলেও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এদিকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা অযৌক্তিক তিন দফা দাবি করেছেন। সেগুলোর নিরসন করতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়া হবে না।
দিনাজপুরে সাত দফা দাবিতে কারিগরি শিক্ষার্থীদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ
দিনাজপুরে সাত দফা দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। পরে তাঁরা দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বাঁশ ফেলে অবরোধ শুরু করেন।
এদিকে রেলপথ অবরোধ করায় পঞ্চগড় থেকে ঢাকা ও রাজশাহীগামী দুটি ট্রেন আটকা পড়ে প্রায় দুই হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করায় শহরে উভয় পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে সকাল নয়টা থেকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সাত দফাসংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ফেস্টুন হাতে সড়কে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় মাইকে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সাত দফা দাবি উল্লেখ করে বক্তব্য দেন। বেলা ১১টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা। দুপুর ১২টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অবরোধ কর্মসূচি চলছিল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোহাম্মদ সিফাত বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সাত দফা দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি আমরা। সেই দাবি না মেনে উল্টো আন্দোলন করলে গুলি করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলোর প্রতি ও আন্দোলনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আবারও রাস্তায় নেমেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে না, আমরা এভাবেই আন্দোলন করে যাব।’
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে আছে উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ কেবল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রাখতে হবে, ৫০ শতাংশ পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে, ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এবং ডেস্ক ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে জায়গা দিতে হবে, টেকনিক্যাল ক্যাডার থেকে অন্যত্র স্থানান্তর বন্ধ করতে হবে, বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের অনুপাত ১ দশমিক ৫ নির্ধারণ করতে হবে এবং ল্যাব-ওয়ার্কশপ আধুনিকীকরণ, পর্যাপ্ত শিক্ষক, উপকরণ সরবরাহ, ক্রেডিট ট্রান্সফার চালুসহ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতসহ করতে হবে।
এদিকে সড়ক অবরোধ করায় দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন গলিতে তীব্র যানজট দেখা গেছে। প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও রাজশাহীগামী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রায় দুই হাজার যাত্রী আটকা পড়েছেন।
