চাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা

■ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই প্যানেলে সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাফায়াত হোসেন মনোনীত হয়েছেন।

এ ছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনয়ন পেয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইয়ুবুর রহমান তৌফিক।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির চাকসু নির্বাচনের এই প্যানেল ঘোষণা করেন।

প্যানেল ঘোষণার সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্যানেল ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খেলাধুলা ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম বিপ্লব, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জয় বড়ুয়া, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক হৃদয়, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদুল কায়সার, দফতর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, সহ-দফতর সম্পাদক শাহরিয়ার উল্লাহ ফাহাদ, ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নুজহাত জাহান, সহ-ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক শাফকাত শফিক, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক মো. ওজায়ের হোসেন, গবেষণা ও উন্নয়ন সম্পাদক ফাইরুজ সাদাফ দ্বীপ, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক ইমাম হাসান, স্বাস্থ্য সম্পাদক মোহাম্মদ আবরার গালিব, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক শাহরিয়ার লিমন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক শ্রুতিরাজ চৌধুরী, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক মো. সায়েম উদ্দিন আহমেদ, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সাকিব, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক মো. জাবেদ, সদস্য ফয়সাল প্রান্ত বাবর, সদস্য মিজান মিয়া, সদস্য নুসরাত জাহান, সদস্য এস এম তরিকুল ইসলাম রিমন ও সদস্য তায়েফ হোসেন ইমন।

প্যানেল ঘোষণার পর নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সাহসী, মেধাবী ও বিচক্ষণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ছাত্রদলের প্যানেলকে জয়ী করবেন। ছাত্রসমাজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দীর্ঘদিন ধরে যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন, তাদেরই প্যানেলে মনোনীত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে। যদিও এখানে আমরা বিভিন্ন কারচুপির অভিযোগ পেয়েছি। একই ধারাবাহিকতায় আজ চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হলো। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদলের প্রার্থীদের বেছে নেবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন এখানে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। তারা একটি দলের প্রতি দুর্বলতা দেখাচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ আচরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

আগামী ১২ অক্টোবর চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।

বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন পর্যন্ত চাকসু ২৬টি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৫২৮ জন। আর ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলের ২০৬টি পদে মনোনয়ন নিয়েছেন ৬৩৪ জন।

চাকসুর নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম এবং ১৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির কারণে নির্বাচন কমিশন পরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।

এদিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক তালিকা প্রকাশিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর। চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশিত হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।

চাকসু ও হল সংসদ আচরণবিধি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময় কোনও মিছিল-শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচ জনের বেশি সমর্থক নেওয়া যাবে না।

সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এবার ৩৫ বছর পর হচ্ছে নির্বাচন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চাকসু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই গঠিত হয়েছিল চাকসু। শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের মানসিক সংস্কৃতির বিকাশ, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার পারস্পরিক সৌহার্দ্যবোধ ও রাষ্ট্রের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্যই গঠিত হয় এটি। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। পরের বছর ১৯৭১ সালেই হয় এর পরের নির্বাচন।এর পর ১৯৭৩ ও ১৯৮০ সালে হয় পরবর্তী দুইটি নির্বাচন। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেবরুয়ারিতে। ১৯৯০ সালে ছাত্র ঐক্য নেতা ফারুকুজ্জামান নিহত হওয়ার অযুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয় চাকসু নির্বাচন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত অকেজো হয়ে পড়ে ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চার প্রাণ কেন্দ্রটি।

চাকসু নেতৃবৃন্দের তালিকা

ক্রমিকসালভিপিছাত্র সংগঠনজিএসছাত্র সংগঠন
১৯৭০মোহাম্মদ ইব্রাহিমআব্দুর রব
১৯৭২শমসুজ্জামান হীরাছাত্র ইউনিয়নমাহমুদুর রহমান মান্নাবাংলাদেশ ছাত্রলীগ
১৯৭৪এসএম ফজলুল হকজাসদ ছাত্রলীগ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল)গোলাম জিলানী চৌধুরী
১৯৭৯মাজহারুল হক শাহ চৌধুরীজাসদ ছাত্রলীগ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল)জমির চৌধুরীবাংলাদেশ ছাত্রলীগ
১৯৮১জসিম উদ্দিন সরকারবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরআবদুল গাফফারবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
১৯৯০নাজিম উদ্দিনজাতীয় ছাত্রলীগআজিম উদ্দিনবাসদ ছাত্রলীগ
শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *