ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। এর মধ্য দিয়ে শিল্পোন্নত (জি সেভেন) সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে এই স্বীকৃতি দিল।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) এই তিন দেশ পর্যায়ক্রমে ফিলিস্তিনকেকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির প্রথম ঘোষণা আসে কানাডার পক্ষ থেকে। এরপর স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়া ও সবশেষে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‌‘শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধান পুনর্জীবিত করতে আমি আজ অসাধারণ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করছি যে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক ভিডিও বার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ঘোষণা দিয়েছেন।

এতে তিনি বলেন, “আজ শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের আশা পুনরুজ্জীবীত করতে আমি মহান এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পরিষ্কারভাবে বলছি যে, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।”

সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওতে স্টারমার বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তে থাকা ভয়াবহতার মধ্যে আমরা শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করছি। এর মানে হচ্ছে, নিরাপদ একটি ইসরায়েল রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি কার্যকর ফিলিস্তির রাষ্ট্র থাকা- এ মুহূর্তে এর কোনওটিই নেই।

“ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এখন এসে গেছে।” ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মানুষ যাতে একটি ভাল ভবিষ্যত পায় সেই প্রতিশ্রুতি দিতেই যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন স্টারমার। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের জন্য এটি কোনও পুরস্কার নয়, বলেন তিনি।

এর আগে কানাডা থেকে আসা প্রথম ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। এক্সে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “কানাডা আজ থেকে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একইসঙ্গে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গঠনে অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানায়। তবে অধিবেশনের আগেই স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছে দেশ দুটি।

অন্যদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনিকে স্বীকৃতি দেবে।

চলতি বছরের জুলাইয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই শান্তিচুক্তির প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান পাল্টাবে। এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন, কারণ এতদিন ধরে দেশটির সরকারগুলো ধারাবাহিকভাবে বলছিল, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আসবে কেবল শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং সর্বোচ্চ প্রভাব ফেলতে পারে এমন সময়ে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ইসরায়েলি সরকার, বন্দিদের পরিবার এবং কিছু কনজারভেটিভ নেতা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এমন পদক্ষেপ “সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করবে”। তবে ব্রিটিশ মন্ত্রীরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তির আশা বাঁচিয়ে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়াটা নৈতিক দায়িত্ব।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *