■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯৮ জন। এর মধ্যে এককভাবে সেপ্টেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ৭৬ জনের। এ মাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে ৫৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৩৭ জন, চট্টগ্রামে ৭০ জন, ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশনের বাইরে ৭৯ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১০১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১১৩ জন, ময়মনসিংহে ২৮ জন, রাজশাহীতে ২৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৪৭ হাজার ৩৪২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৯৬ জন।
ডেঙ্গুতে এ বছরের মৃত্যুপরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়— জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চে কোনো মৃত্যু হয়নি। এপ্রিলে মৃত্যু ৭ জন, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১ এবং আগস্টে ৩৯ জনের। তবে সেপ্টেম্বরেই মৃত্যুর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৭৬ জনে গিয়ে ঠেকেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৪৯ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৬ শতাংশ, খুলনায় ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৪ শতাংশ, রংপুরে ৪৬ শতাংশ, বরিশালে ২২ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৬২ শতাংশ। গত এক মাসে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুরে রোগী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
গত দুই দশকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জুনের শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। বাইরে থেকে বেশি আসছে সংকটাপন্ন রোগী। বরিশাল ও বরগুনায় রোগীর বিপরীতে পর্যাপ্ত শয্যা সংকটের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইন ও ওষুধের সংকট রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। এ জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।