■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
খুব শিগগিরই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে জুলাই সনদের বিষয়বস্তু এবং এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাব ও এবিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান সম্পর্কে সভাকে অবহিত করা হয়।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ঐকমত্য কমিশন সব রাজনৈতিক দল থেকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা পেয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যমগুলো ঐকমত্য কমিশনকে অকল্পনীয় সমর্থন দিয়েছে।
কমিশন সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের সব সদস্যকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা জানিয়েছেন। কমিশনের কাজের চূড়ান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
আজকের বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
পাশাপাশি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আসিফ নজরুল ও আদিলুর রহমান খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৭ সেপ্টেম্বর কমিশনের সর্বশেষ মুলতবি সভা থেকে সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করার জন্য দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো কোনো সমাধানের পথ বের করতে পেরেছে কি না তা জানতে চাওয়া হবে। যদি দলগুলোর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব না আসে তাহলে এই পর্যন্ত যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো তুলে ধরে মতামত চাওয়া হবে। কীভাবে এবং কোন কোন প্রস্তাব দলগুলোর কাছে তুলে ধরা হবে সেই বিষয় চূড়ান্ত করতে গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সভায় সামগ্রিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন কমিশনের সদস্যরা। ১৫ অক্টোবর কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জুলাই জাতীয় সনদের কাজ শেষ করতে চায় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে পাওয়া বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, গণভোট, সাংবিধানিক সংস্কার পরিষদ এর প্রস্তাবগুলোর পাশাপাশি বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেওয়া সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শও উল্লেখ থাকবে। এদিকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিশনকে সনদ বাস্তবায়নে দুটি প্যাকেজের পরামর্শ দেয়। প্রথম প্যাকেজ অনুযায়ী, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ কার্যকর করা হবে। এরপর আদালতের কাছে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মতামত নেওয়া হবে, কখন হতে পারে গণভোট। দ্বিতীয় প্যাকেজে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনে গঠিত সংসদে সনদ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত, তা গণপরিষদ বা সংবিধান সভার দায়িত্ব পালন করবে। সনদ অনুমোদনের পর গণপরিষদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঁচ বছর মেয়াদি সংসদে রূপান্তরিত হবে।
জানতে চাইলে কমিশনের অন্যতম সদস্য ড. মো. আইয়ুব মিয়া বলেন, আমরা প্রথমে দলগুলো থেকে জানতে চাইব তারা কোনো প্রস্তাবে একমত হতে পারল কি না। যদি না পারে তবে এখন পর্যন্ত যেসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলো তাদের সামনে তুলে ধরে মতামত চাওয়া হবে।
এদিকে সংবিধান বদলের অধিকার কারও নেই মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এমনটা হলে দুই বছর বা পাঁচ বছর পরে বারবার এই প্রক্রিয়ায় আবার সংবিধান বদলের দাবি উঠবে। বৈঠকের আগের দিন বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতে ড. মো. আইয়ুব মিয়া বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে গণভোট বা গণপরিষদ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব না।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একাধিক অবস্থান রয়েছে। বিএনপি, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট, বিজেপি, এলডিপিসহ কয়েকটি দল চায় সাংবিধানিক সংস্কার হবে পরের সংসদে। এ ছাড়া বিএনপি গণভোট চাইলেও তা হতে হবে নির্বাচিত সংসদে সংস্কার অনুমোদনের পর। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্তত সাতটি দল চায়, সংবিধানিক আদেশে নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের সব সংস্কার কার্যকর এবং গণভোটে তা অনুমোদন।