অভিযুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর। এছাড়া, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদকে পাওয়া যাচ্ছে না।

শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

তিনি জানান, ৩টি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআরএ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন।

তিনি জানান, ৮ তারিখ চার্জশিট দাখিলের পর এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ১৬ জনকে সেনাসদরে সংযুক্ত করা হয়। তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনাসদরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন রেসপন্স করেছেন। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা ফ্যামিলি থেকে ডিটাচ আছেন।

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, গত মাসের ৫ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর প্রমোশন বোর্ডের কার্যক্রম চলাকালে মেজর জেনারেল থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একত্রিত ছিলেন। এই বোর্ড শেষে অনুষ্ঠিত হয় জেনারেল কনফারেন্স ও ফরমেশন কমান্ডার কনফারেন্স, যেখানে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল।

কবীর আহাম্মদের বিষয়ে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি মিসিং।

গুমের সঙ্গে জড়িতদের গত ১৪ মাসে কেন সেনাবাহিনী সেনা আইনে বিচার করা হলো না এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ডিজিএফআই সেনাবাহিনীর অধীনের সংস্থা নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এর মধ্যে র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি।

দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।

প্রসঙ্গত, গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী দল ও মতের লোকদের গুম করে র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

একই সঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

আসামিদের মধ্যে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী রয়েছেন। এছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালক—লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল হামিদুল হকও রয়েছেন আসামির তালিকায়।

অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র‌্যাব কর্মকর্তা কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *