প্রথমবার বাংলাদেশে আসছেন জাকির নায়েক

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

উপমহাদেশের খ্যাতিমান ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ডা. জাকির নায়েক প্রথমবারের মত বাংলাদেশে আসছেন। আগামী নভেম্বরে তিনি ‘মেগা লেকচার ইভেন্ট’-এ অংশ নেবেন।

আয়োজক সংস্থা স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রোপাইটার আলী রাজ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগামী সোমবার (২০ অক্টোবর) এক কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আয়োজনের বিস্তারিত সময়সূচি এবং স্থান ঘোষণা করা হবে।’ প্রাথমিকভাবে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠানটি করার চিন্তাভাবনা চলছে।

ডা. জাকির নায়েক প্রথম প্রোগ্রামটি কবে হতে পারে, সে প্রসঙ্গে আলী রাজ আরও বলেন, ‘প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ অথবা ২৯ নভেম্বর ঢাকায় ডা. জাকির নায়েকের প্রথম প্রোগ্রামটি হবে। তবে কেবল ঢাকাতেই নয়, ঢাকার বাইরেও এই প্রোগ্রাম করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কর্ণধার রাজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ নভেম্বর ঢাকায় আসবেন ড. জাকির নায়েক।তার নিজেরই একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। প্রাথমিকভাবে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠানটি করার চিন্তাভাবনা চলছে।

তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ২০ অক্টোবরের পরে বিস্তারিত জানানো হবে।  

তিনি উল্লেখ করেন, ডা. জাকির নায়েক এ আগমন কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশে নয়, বরং এটি সম্পূর্ণ চ্যারিটি প্রোগ্রাম হিসেবে পরিচালিত হবে।

ভক্ত ও অনুরাগীদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর ডা. জাকির নায়েকের আগমন বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ডা. জাকির নায়েক বর্তমানে মালেশিয়ায় স্থায়ী নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছেন।

জাকির নায়েকের পুরো নাম জাকির আব্দুল করিম নায়েক। তিনি একজন ভারতীয় ইসলামি চিন্তাবিদ, ধর্মপ্রচারক, বক্তা ও লেখক যিনি ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে কাজ করেন। তিনি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে, যার মাধ্যমে তাঁর বক্তৃতা প্রায় দশ কোটি দর্শকের নিকট পৌঁছে যায়। তাকে “তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের একজন বিশেষজ্ঞ”,”অনুমেয়ভাবে ভারতের সালাফি মতাদর্শের অনুসারী সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি”,”টেলিভিশনভিত্তিক-ধর্মপ্রচারণার রকস্টার এবং আধুনিক ইসলামের একজন পৃষ্ঠপোষক” এবং “পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ইসলাম ধর্মপ্রচারক” বলা হয়ে থাকে। বহু ইসলামি ধর্মপ্রচারকদের সাথে তার ভিন্নতা হল, তার বক্তৃতাগুলো পারস্পারিক আলাপচারিতা ও প্রশ্নোত্তরভিত্তিক, যা তিনি আরবি কিংবা উর্দুতে নয় বরং ইংরেজি ভাষায় প্রদান করেন, এবং অধিকাংশ সময়েই তিনি ঐতিহ্যগত আলখাল্লার পরিবর্তে স্যুট-টাই পরিধান করে থাকেন।

পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার হলেও ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। ইসলাম এবং তুলনামূলক ধর্মের উপর তিনি তার বক্তৃতার বহু পুস্তিকা সংস্করণ প্রকাশ করেছেন। যদিও প্রকাশ্যে তিনি ইসলামে শ্রেণিবিভাজনকে অস্বীকার করে থাকেন, তবুও অনেকে তাকে সালাফি মতাদর্শের সমর্থক বলে মনে করেন, এবং অনেকে তাঁকে ওয়াহাবি মতবাদ প্রচারকারী একজন আমূল-সংস্কারবাদ। ইসলামিক “টেলিভেগানিস্ট” বা “তহবিল সংগ্রহকারী টেলিভিশন ধর্মপ্রচারক” বলেও মনে করে থাকেন। বর্তমানে ভারত, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে তার ধর্মপ্রচার নিষিদ্ধ। বলা হয়ে থাকে যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের বাইরের তুলনায় এর ভেতরেই তাঁর সমালোচকের সংখ্যা বেশি।

জাকির আবদুল করিম নায়েক ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। অতঃপর, তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম-ধর্ম প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন। নায়েকের স্ত্রী, ফারহাত নায়েক, ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নারীদের শাখায় কাজ করেন।

জাকির বলেন তিনি আহমেদ দিদাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন, যার সাথে তিনি ১৯৮৭ সালে সাক্ষাত করেন। জাকিরকে অনেক সময় ‘‘দিদাত প্লাস’’ বলা হয়, এই উপাধি দিদাত নিজে দেন।

এছাড়াও তিনি মুম্বাইয়ের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ইউনাইটেড ইসলামিক এইডের প্রতিষ্ঠাতা, যা দরিদ্র ও অসহায় মুসলিম তরুণ-তরুণীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে।

ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে তাকে “পিস টিভি নেটওয়ার্কের পৃষ্ঠপোষক ও আদর্শিক চালিকাশক্তি” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে চ্যানেলটি “সমগ্র মানবতার জন্য সত্য, ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, সৌহার্দ্য ও জ্ঞানের” প্রচারের লক্ষ্যে কাজ করে বলে এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৬ সালে, একটি প্রেস কনফারেন্সে, জাকির নিজেকে নন-রেজিস্ট্যান্ট ইন্ডিয়ান (এনআরআই) বা বছরের অর্ধেকের বেশি সময় প্রবাসে বসবাসকারী ভারতীয় হিসেবে দাবি করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *