■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। রোববার জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-১ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের কথা আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমকে অবহিত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল আসাদ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে The Prisons Act, 1894 (ix of 1894) এর ধারা ৩(বি) অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসস্থ বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস’ বিল্ডিং নং-৫৪, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকাকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হইলো।
এতে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ আদেশ জারি করা হইলো। ইহা অবিলম্বে কার্যকর হইবে।
আদালত যেখানে রাখতে বলবে আসামিকে সেখানে রাখা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
সোমবার বিকেলে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কোনো নির্দিষ্ট জায়গাকে সাব জেল (অস্থায়ী কারাগার) ঘোষণা করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে। কোন জায়গাটাকে জেল ঘোষণা করবে বা প্রিজন অথরিটির আওতায় নিয়ে আসবে, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সুতরাং এখানে আমাদের কনসার্ন হওয়ার কোনো বিষয় নয়। আমাদের বক্তব্য হলো, যখন কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে, তখন এই পরোয়ানাটাকে তামিল করা হবে। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন পরোয়ানাটা তামিল করবে, কাউকে গ্রেফতার করবে, তখন সরাসরি কাউকে জেলে নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কারণ আইন অনুযায়ী আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে আনতে হবে।
তিনি বলেন, আসামিকে আদালতে আনার পর আদালত যদি (ফার্দার অর্ডার) আদেশ দিয়ে বলেন, তাকে কারাগারে পাঠানো হোক, তখন কেন্দ্রীয় কারাগার বা জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যে, এমপি হোস্টেল হতে পারে, অথবা অন্য কোনো জায়গাকে যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করে সেই জায়গায় পাঠানো যেতে পারে। ফলে সেটা কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে সেটা আমাদের প্রসিকিউসন বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিবেচ্য বিষয় হলো আইন অনুযায়ী কাজটা করতে হবে। আসামিকে গ্রেফতার যদি করা হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে আনতে হবে। সেটা সংবিধানে যেমন আছে, আইসিটি আইনে ও সিআরপিসিতেও আছে। আসামিকে গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। এরপর আদালত যেখানে তাকে রাখতে বলবে সেখানে রাখবে।
এর আগে সেনা সদর জানায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাসদর। তবে মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদকে পাওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি জানান, ৩টি মামলায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন, এলপিআরএ একজন, আর বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন।
তিনি জানান, ৮ তারিখ চার্জশিট দাখিলের পর এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ১৬ জনকে সেনাসদরে সংযুক্ত করা হয়। তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেনাসদরে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়। মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন রেসপন্স করেছেন। তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে। তারা ফ্যামিলি থেকে ডিটাচ আছেন।
কবীর আহাম্মদের বিষয়ে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি মিসিং।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপকারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামি রাখতে পারেন। এমন নজির এর আগেও রয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এক-এগারোর সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার পর সংসদ ভবন এলাকায় দুটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে তাঁদের রাখা হয়েছিল।