প্রজ্ঞাপন না এলে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ করবেন শিক্ষকরা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

তিন দফা দাবি মেনে নিয়ে আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ করা হবে বলে জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

আন্দোলনকারী ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বলেন, দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। এর মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আগামীকাল দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড় ব্লকেড কর্মসূচি পালনের জন্য রওনা দেবেন তাঁরা।

আজ বিকেলে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাইকোর্ট মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পরে সেখানেই অবস্থান নেন তাঁরা। সেখান থেকে রাতে নতুন কর্মসূচির কথা জানান শিক্ষকনেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।

শিক্ষা উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষকদের এই প্রতিনিধি বলেন, আপনি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছেন আপনি অপদার্থ শিক্ষা উপদেষ্টা। আমি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে চাই, আমাদেরকে ঠেলে দেবেন না আপনার পদত্যাগের আন্দোলনের দিকে। আজকে আন্দোলনের ঢেউ সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী আজ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষকরা খোলা আকাশের নিচে বসে আছে, অনেকে দুপুরেও কিছু খায়নি; এমন অবস্থায় আপনাকে সামনে থেকে শিক্ষক সমাজের পাশে দাঁড়াতে হতো। উল্টে আপনি অদেখা ভদ্রতায় বসে আছেন; শিক্ষক-শিক্ষার্থীর কষ্ট বোঝানো আপনার দায়িত্ব ছিল, সেটা আপনি পালন করেননি।

তিনি বলেন, আজ রাতে আমরা শহীদ মিনারে ফিরে গিয়ে রাত্রিযাপন করব এবং আগামীকাল দুপুর ১২টার আগে প্রজ্ঞাপন না এলে ঠিক ১২টায় শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচি পালন করব। এই সিদ্ধান্ত অপরিবর্তনীয়। 

প্রশাসনকে সতর্ক করে তিনি বলেন, একটু কান খুলে শুনেন। এতদিন আপনাদের সহযোগিতা করেছি। আগামীকাল ব্লকেডে যদি কোনো রকমের বাধা তৈরি করা হয়, শিক্ষক সমাজ এই পুলিশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করবে, প্রতিহত করবে। আর কোনো শিক্ষকের একটা চুল যদি স্পর্শ করেন, বিনা জবাবে আপনাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।

মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। এতে সারা দেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নেন। কিন্তু সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি তাঁরা। লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান থেকে পানি ছুড়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও সংহতি জানান।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বাকি দুটি দাবি হলো শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের জন্য চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শতাংশের হিসাবে বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি এবং ৫ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই হিসাব অনুযায়ী বাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়।

দেশের ৩০ হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবমিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। এরমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রায় সাড়ে তিন লাখ, আর কর্মচারী দেড় লাখেরও বেশি। বিরাট সংখ্যক এ শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া বাবদ মাসে মাত্র এক হাজার টাকা আর চিকিৎসা ভাতা পান মাত্র ৫০০ টাকা! এই দুই ভাতা ও উৎসব ভাতা (বোনাস) বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। তবে কোনো সমাধান দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সবশেষ গত আগস্টে শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো শতাংশ হারে বাড়িভাড়ার দাবি তোলেন। মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার দাবি জানান তারা। তাদের দাবি উপেক্ষা করে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। যা যৌক্তিক নয় বলে বলে দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *