হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাইলেন চিফ প্রসিকিউটর

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘অপরাধের প্রাণভোমরা’ উল্লেখ করে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ আবেদন জানান তিনি।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সকল অপরাধের প্রাণভোমরা শেখ হাসিনা। সে অনুশোচনাহীন ও হৃদয়হীন অপরাধী। তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এ থেকে অনুকম্পা পাওয়ার সুযোগ নেই। ১৪ শ জনের হত্যার জন্য ১৪ শ বার ফাঁসি দেওয়া উচিত ছিল। যেহেতু সেটা সম্ভব নয়, তাই সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এভাবে নিজের দেশের নাগরিককে হত্যা করতে না পারে।’

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে গণঅভ্যুত্থান দমনে অপরাধের ‘গ্যাং অফ ফোর’-এর একজন হিসেবে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তারও সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেন তাজুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন আইন অনুযায়ী আদালতকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, তাই তার ব্যাপারে ট্রাইব্যুনাল যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন। 

এছাড়া, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অপরাধীদের সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদনও করেন চিফ প্রসিকিউটর।

শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পঞ্চম দিনে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামী সোমবার ধার্য করা হয়েছে। 

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। 

ঐতিহাসিক এই মামলায় ইতোমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছেন শহিদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। এ পর্যন্ত মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন।

আজ প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম। অন্য প্রসিকিউটররাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ শুনানিতে অংশ নেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

একপর্যায়ে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্র্যাইব্যুনাল। 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা ট্রাইব্যুনালে চলমান। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, এর দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে। 

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *