■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিকেল ৫টার দিকে ঐতিহাসিক এ সনদে স্বাক্ষর করেন তারা।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত আছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ আরও বিভিন্ন দলের নেতারা।
বিকেল ৪টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা ৬টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে হওয়া এসব আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়। এরপর এই ৮৪ প্রস্তাবকে অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদের খসড়া তৈরি করে ঐকমত্য কমিশন। খসড়ার ওপর আবার আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়।
সব দলের মতামত পর্যালোচনা করে জুলাই জাতীয় সনদ লিখিত আকারে চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত মঙ্গলবার সনদের চূড়ান্ত কপি সব রাজনৈতিক দলকে দেওয়া হয়।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করা জুলাই যোদ্ধাদের ধাওয়া দিয়ে ওই এলাকা থেকে বের করে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর পুরো সংসদ ভবন ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর ১টা ২৬ মিনিটের দিকে জুলাই যোদ্ধা দাবি করা একটি পক্ষ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর ২টার পর পর্যন্ত চলতে থাকে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।
জানা যায়, গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়া জুলাই যোদ্ধাদের মঞ্চ এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা সংসদ ভবন এলাকার বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং লাঠি হাতে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেন।
এর আগে, শুক্রবার সকালে ‘জুলাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধা’ ব্যানারে অনেকেই সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করে মঞ্চের সামনে অতিথিদের চেয়ারে বসে স্লোগান দিতে থাকেন।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ২৫ দল
জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই সনদ সই হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অতিথিরা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং যে ২৫টি দলের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে, সেই দলগুলো হলো—
১. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির।
২. খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের।
৩. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।
৪. আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
৫. নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
৬. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
৭. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
৯. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
১০. গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
১১. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব।
১২. গণ অধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
১৩. বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী।
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান।
১৫. ১২–দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম।
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
১৭. গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।
১৮. জাকের পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্র ফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ।
১৯. জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস।
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার।
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম।
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)।
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
২৪. ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী।
২৫. আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদের নেতারা যাননি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই পর্বে আলোচনা করে জুলাই সনদ তৈরি করেছে। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে তারা। জাতীয় পার্টিকে এই আলোচনায় রাখা হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে।
এদিকে প্রেস উইং জানায়, অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।