শাহজালালের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ও বিমানবাহিনীর দুটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা কাওছার মাহমুদ।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিট এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যক্রম শুরু করে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, বিমানবন্দরের ভেতরে ৮ নম্বর গেটের কাছে স্কাই ক্যাপিটাল-এর অফিস ও ইম্পোর্ট কার্গো এরিয়ায় আগুন লেগেছে। দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিট কাজ করছে।

বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন পৌঁছে যায় ইলেকট্রনিক্স গোডাউনে। এর মিনিট বিশেক পর কেমিক্যাল গোডাউনে দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এলে অগ্নিকাণ্ড প্রলয়ঙ্করী রূপ ধারণ করে।

এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে যায় গোটা কার্গো ভিলেজে। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ।

শাহজালালের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ আগুন

আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, কার্গো সেকশনে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনসহ বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ফায়ার ইউনিট।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো প্রাণহানি বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আমাদের এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নয়জনকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। 

জানা গেছে, বাকি আটজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত শুরু করেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিরাপদ ও সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, প্রাথমিক তদন্ত শেষে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

এরপর ঢাকাগামী বেশ কয়েকটি ফ্লাইটকে বিকল্প রুটে পাঠানো হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করেছে। এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও ট্যাক্সিওয়েতে আটকে আছে।

দিল্লি থেকে ঢাকাগামী ইন্ডিগোর ফ্লাইট অবতরণ করেছে কলকাতায়। শারজাহ থেকে ঢাকাগামী এয়ার এরাবিয়ার ABY514 ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে।

হংকং থেকে ঢাকাগামী ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্সের CPA049 ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ না করতে পেরে চট্টগ্রামের আকাশে গিয়ে চক্কর দিচ্ছে।

এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সৈয়দপুর থেকে ঢাকাগামী ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ না করে চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে। একইভাবে ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্সের চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পর পুনরায় চট্টগ্রামে ফিরে গেছে।

এদিকে শনিবার বেলা ৩টা ৩১ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৪০ নম্বর ফ্লাইটটি ৩৯৬ যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরণ করে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ।

এদিকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিমান কর্তৃপক্ষ বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, আগুন মূলত কার্গো ভিলেজ এলাকায়, যাত্রী টার্মিনালে এর প্রভাব পড়েনি। তবে বিমান চলাচল সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম, সিলেট ও কলকাতায় ডাইভার্ট করা হয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পোস্ট অফিস ও হ্যাঙ্গারের মাঝামাঝি স্থানে কার্গো ভিলেজ।

আগুন লেগেছে আমদানির কার্গো কমপ্লেক্স ভবনে। এটির অবস্থান বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের পাশে। এই গেটকে হ্যাঙ্গার গেট বলা হয়।

আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে গেট আছে ৩টি। আগুন লাগে কমপ্লেক্সের উত্তর দিকে, ৩ নম্বর গেটের পাশে। আগুন এখন পুরো ভবনে ছড়িয়েছে।

উড়োজাহাজ থেকে মালামাল ওঠানো–নামানোয় যুক্ত থাকা কোম্পানি ভয়েজার এভিয়েশনের গাড়িচালক মো. রাসেল মোল্লা বলেন, আগুন লাগার সময় তার গাড়িটি ৮ নম্বর গেটের ১০০ মিটারের মধ্যে ছিল। তিনি সেখান থেকে গাড়িটি দ্রুত সরিয়ে নেন। এসময় ভেতরে থাকা মানুষদের বের করে দেওয়া হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *