■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ও ২০২১ সালের মার্চ মাসে মোদিবিরোধী বিক্ষোভ কর্মসূচি দমনে শাহাদাতবরণকারীদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার বিভাগের আয়োজনে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের হত্যাযজ্ঞে শহীদ ৫৮টি পরিবার এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসের হত্যাকাণ্ডে শহীদ ১৯টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পরিবারপ্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে মোট ৭ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, শহীদদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। ঐতিহাসিক শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আজকের এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, শাপলা চত্বরেই খোদাই করে লেখা হবে শহীদদের নাম, যাতে কেউ ইতিহাস থেকে তাদের নাম মুছতে না পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, “গত ১২ বছরে শাপলা চত্বরের শহীদ পরিবারের সদস্যরা কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পর, স্থানীয় সরকার বিভাগ শহীদ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুততম সময়ে অর্থবহ ও কার্যকর সহযোগিতা পৌঁছে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করছি আমরা।”
ডা. আ ফ ম খালিদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, শাপলা চত্বর এবং মোদি বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের আর্থিক সহায়তা প্রদান স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ। তিনি এই উদ্যোগকে দুই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্বীকৃতি প্রদানের সূচনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এক বৃহৎ সমাবেশ আয়োজন করেছিল। তৎকালীন আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বে তারা ব্লগারদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য ও নারীনীতির বিরোধিতা করে ১৩ দফা দাবি পেশ করেন।
দিনভর অবস্থান শেষে রাতেও হেফাজতের আলেম, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চত্বরে অবস্থান বজায় রাখেন।
গভীর রাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি অভিযানে নামলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। রাত তিনটার দিকে চারদিক থেকে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে শাপলা চত্বর ও আশপাশের এলাকা আতঙ্কে পরিণত হয়।
হেফাজতের খসড়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই অভিযানে অন্তত ৯৩ জন কর্মী নিহত হন। তালিকায় নিহতদের নাম, পরিচয় ও পরিবারের সদস্যদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাচাই করে দেখা যায়, শহীদদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন তরুণ ও যুবক।
সংগঠনের নেতাদের দাবি, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। দীর্ঘ এক যুগ পর সরকারের এই সহায়তা উদ্যোগ শহীদ পরিবারের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। যাচাই কাজ শেষে জেলা পর্যায়ে সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরি আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টাকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এই মহতী উদ্যোগে সারা বাংলার আলেম সমাজ সম্মানিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সাজিদুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।