■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের একজন মাহির রহমানকে পুলিশে দিয়েছেন তার নিজের মা। নিহত জোবায়েদের পরিবারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মাহিরকে শনাক্ত করা হয়।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ভোরে মাহিরের মা নিজেই ছেলেকে নিয়ে বংশাল থানায় হাজির হন এবং তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
এর আগে রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আরমানিটোলায় টিউশনিতে গিয়ে খুন হন পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন। আরমানিটোলার একটি বাড়ির সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জোবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করতে চেয়েছি— শিক্ষার্থী বর্ষা, তার বাবা-মা, বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান এবং মাহিরের বন্ধু নাফিসকে। কিন্তু বংশাল থানার ওসি মামলা নিতে রাজি হননি।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ওসি বলেছেন, এতজনের নাম দেওয়া ঠিক হবে না। বর্ষার বাবা-মায়ের নাম দিলে মামলাটা নাকি হালকা হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা তাদের নাম দিতে চাই। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
মামলা নিতে বিলম্বের কারণ হিসেবে শুরুতে বলা হয়, রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ওসি থানায় ছিলেন না। পরে তিনি আসার পর অভিযুক্তের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন, যা দেরি আরও বাড়ায়।
এ বিষয়ে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা যাদের নাম দিতে চান, আমরা সেই নামেই মামলা নেব। শুধু পরামর্শ দিয়েছি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।’
পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, রোববার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে আরমানিটোলার পানির পাম্প গলির ‘রওশন ভিলা’ নামের বাড়ির সিঁড়ি থেকে রক্তমাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সিসিটিভি ফুটেজে দুজন তরুণকে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে, তবে তাদের মুখ স্পষ্ট নয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেনের জানাজা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, ‘সঠিক তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে, তবে তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। আশা করছি, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১০টার মধ্যে আপনাদের সুসংবাদ দিতে পারব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আসামি ধরতে সময় লাগতে পারে, তবে প্রকৃত ঘাতকদেরই আমরা গ্রেফতার করব। তাদের ধরতে পারলেই জানা যাবে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না।’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘জোবায়েদের বড় ভাই সৈকত ৪৯তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু জোবায়েদ সে খুশির খবর জেনে যেতে পারল না। এ ঘটনায় প্রকৃত হত্যাকারীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। আমাদের দাবি কোনো ধরনের ফাঁকফোকর আমরা দেখতে চাই না। আমরা প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার দেখতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ২ দিন শোক দিবস সভা ও শোক র্যালি পালন করব। আমরা আগামী ১০ ঘণ্টা আলটিমেটাম দিলাম। যদি আমাদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না দেখি তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি দেব। এখানে পুলিশ প্রশাসন যারা, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে এই পুলিশকে জনগণের শত্রু বানানো হয়েছিল। আমার শিক্ষার্থীর বাবা-চাচা কে কেন পাঁচ ঘণ্টা বসিয়ে রাখল। তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আমরা জনগণের জন্য কষ্টের কারণ হতে চাই না। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে চাই। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এই বিষয়ে এক মুদ্রা পরিমাণ ছাড় দেবো না। স্বৈরাচার পরবর্তী সময়ে আমরা এই ওসি চাই না।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই ছিলাম। আমরা প্রকৃত দোষী গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত পাশে থাকব। আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’