■ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন বলেছেন, পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের শিক্ষার্থী জোবায়েদের খুনের ঘটনাকে যেভাবে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প হিসেবে সাজিয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে ক্যাম্পাসের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘ত্রিভুজ প্রেমের একটা গল্প’ সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জোবায়েদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে।
জোবায়েদ হোসেনকে খুনের দুদিন পর বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮), মাহির রহমান (১৯) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০) গ্রেফতার হন। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্ষাকে পড়াতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে জোবায়েদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বর্ষার সঙ্গে আগে থেকেই মাহিরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা মূলত ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’। এর জেরে মাহির ও আয়লান মিলে বর্ষার সহযোগিতায় হত্যা করেন জোবায়েদকে।
পুলিশের এই বক্তব্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে সংশয় আছে, প্রশ্ন আছে। জোবায়েদকে হত্যার আগে তার ছাত্রী বর্ষা তাকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, সে কখন আসতেছে, কতটুকু এসেছে এবং তার আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়, পরবর্তীতে তার লোকেশন চেক করে। বিষয়টা স্বীকারোক্তি দিয়েছিল ছাত্রী বর্ষা। সেটি এজাহারের প্রথম সূত্র হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি কেন বাদ দেওয়া হলো? সেটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, নাকি পরে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের প্রথম প্রশ্ন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা–কর্মীর পাশাপাশি জোবায়েদের আইনজীবী মো. ইশতিয়াক হোসেনও ছিলেন।
অধ্যাপক রইছ্ উদ্দীন বলেন, জোবায়েদ নির্মম খুনের শিকার হয়েছে। আমরা ২১ তারিখ সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, মামলায় যে এজাহার দায়ের করা হয়েছে, সেখানে ইন্ধনদাতা বর্ষার একটি বক্তব্য রয়েছে। সে জোবায়েদের লোকেশন ট্র্যাক করেছে এবং রুমমেটকে জানিয়েছে। এটা প্রথম সূত্র হওয়ার কথা, কিন্তু কেন এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?
তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে কালো ও লাল টি-শার্ট পরিহিত দুইজনকে দেখা গেছে। তারা কি সেই দুইজন আসামি? হলে তাদের পোশাক জব্দ করা হয়েছে কি না, সেটিও প্রশ্ন।
তিনি আরও বলেন, মাত্র একবার ছুরিকাঘাতে জোবায়েদ নিহত হয়েছে। মাহিরের মতো খাটো উচ্চতার কেউ কীভাবে জোবায়েদের উচ্চতার ছেলেকে হত্যা করতে পারে? নাকি প্রফেশনাল কিলার ভাড়া করা হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা জানতে চাই।
শেষে তিনি আহ্বান জানান, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, পুলিশ বাদীর ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। তবে যদি এমন কিছু ঘটে, আমরা তা প্রকাশ করব।’
তিনি বলেন, আমরা শোকে বিহ্বল। আমাদের স্বাভাবিক জীবনের গতি থেমে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের জন্য যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, সেই মঞ্চেই জোবায়েদের শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস জোবায়েদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হবে।
জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সেখান থেকেও পুলিশর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু সাইদ মো. রিপন রউফ সমাবেশে বলেন, ‘গতকাল পুলিশের কর্মকর্তারা যেভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা যেভাবে হাসাহাসি করেছেন, তাতে মনে হয় না তাঁরা একটি হত্যার বিবরণ দিচ্ছেন। তাঁরা কোনোভাবেই দায়িত্বশীল আচরণ করেননি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আরমানিটোলার নুরবক্স রোডের রৌশান ভিলার ৫ম তলায় ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতে গিয়েছিলেন জোবায়েদ হোসেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। সেদিন বাসার গেট থেকে প্রবেশ করার পর সিঁড়িতে চাকু দিয়ে জোবায়েদের গলার ডান পাশে আঘাত করে। এ আঘাতে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ হওয়ায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় জোবায়েদের।