■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন ১১ দিনের মাথায় স্থগিত করেছে সরকার। কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।
শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।
গত ১৩ অক্টোবর কক্সবাজারকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) যুগ্মসচিব আহমেদ জামিল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, সিভিল এভিয়েশন রুলস ১৯৮৪-এর সাব রুল ১৬ অনুযায়ী সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করছে। জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ ছিল তাতে।
বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।
বেসামরিক বিমান চলাচল উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন শুক্রবার বলেছেন, “এ বিষয়ে একটা দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
সরকার পরিবর্তনের পর বিগত আমলের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও কক্সবাজার বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ থেমে থাকেনি। গত মার্চে এ বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এরপর বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিরাও দফায় দফায় নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে সেখানে গেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে ‘আন্তর্জাতিক’ স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপক তোড়জোড় থাকলেও সেখান থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালানোর তেমন আগ্রহ দেখায়নি এয়ারলাইনগুলো।
চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি গন্তব্যের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চললেও কক্সবাজার থেকে এ ধরনের ফ্লাইট চালানো এয়ারলাইনগুলো বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মনে করছে না।
বেসরকারি এয়ারলাইনগুলো আগ্রহ না দেখালেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চলতি মাস থেকেই কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা ফ্লাইট চালানোর কথা ছিল। তবে সেই ফ্লাইট ওড়ার আগেই ‘আন্তর্জাতিক’ মর্যাদা হারাল কক্সবাজার।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন জানান, ‘আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। কিছু কাজ বাকি থাকলেও অনুমোদন পাওয়ায় এ মাসেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলার সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্তমানে ৬ হাজার ৭৯০ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে সম্প্রসারিত হয়েছে এবং প্রস্থ ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুট করা হবে। রানওয়ের লোড ক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে, ওয়াইড-বডি বিমান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হবে এবং রানওয়ে লাইটিং আপগ্রেড করা হবে। নতুন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জন্য ১০ হাজার ৯১২ দশমিক ৪৯ বর্গফুট ভবন এবং ৪৯ হাজার ৭৫৩ বর্গফুট সংযোগ ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। সেগুলো হলো রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটে অবস্থিত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
