দৌড় প্রতিযোগিতার নামে টাকা নিয়ে উধাও ‘উড়াও বাংলাদেশ’

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় অনুষ্ঠিতব্য একটি ‘রানিং ইভেন্টের’ নামে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। ‘উড়াও বাংলাদেশ’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজনের আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই হাজার অংশগ্রহণকারীর কাছ থেকে জনপ্রতি ১২০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি সংগ্রহ করে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে।

চলতি বছরের ২৪ আগস্ট তারিখে ‘রান ফর ন্যাশন ২০২৫’ শিরোনামে ইভেন্টটি আয়োজনের ঘোষণা দেয় প্রতারকরা। ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ফিটনেসপ্রেমী ও দৌড় প্রতিযোগীদের আকৃষ্ট করে। প্রচারণায় বলা হয়েছিল, ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে মেডেল, টি-শার্ট, রিফ্রেশমেন্ট, সার্টিফিকেট ও প্রাইজমানি।

প্রচার চলাকালীন প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আকর্ষণীয় পোস্টার, ভিডিও টিজার ও কাউন্টডাউন ক্যাম্পেইন চালায়। অনেকেই বিশ্বাসযোগ্যতা দেখে অনলাইনে বিকাশ ও ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করেন।

কিন্তু ইভেন্টের মাত্র চার দিন আগে, প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও যোগাযোগ নম্বর একযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই আয়োজকদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।

প্রতারিত অংশগ্রহণকারীরা শনিবার রাতে খিলক্ষেত থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১৬৫০) দায়ের করেন। খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’

তিনি আরও জানান, ‘এটি সংগঠিত প্রতারণার ঘটনা হতে পারে। আমরা শিগগিরই মূল হোতাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, ‘উড়াও বাংলাদেশ’ নামে এই সংগঠনটি এর আগে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে অনুরূপ ‘স্পোর্টস ইভেন্ট’ আয়োজনের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তবে সেসব ক্ষেত্রেও কোনো ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়নি, আর অংশগ্রহণকারীদের রেজিস্ট্রেশন ফির কোনো রিফান্ডও পাওয়া যায়নি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মো. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘যে কোনো ইভেন্টে অংশ নেওয়ার আগে আয়োজকের ট্রেড লাইসেন্স, অফিস ঠিকানা, পূর্বের ইভেন্ট রেকর্ড ও পেমেন্ট গেটওয়ের বৈধতা যাচাই করা উচিত। এসব না করলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।’

প্রতারিত অংশগ্রহণকারীরা প্রশাসনের কাছে অর্থ উদ্ধারের পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তাদের বক্তব্য, ‘এই ধরনের ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে দেয়। কেউ যেন ভবিষ্যতে এভাবে প্রতারিত না হয়, তার জন্য কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *