■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
অবশেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতীকের তালিকায় নতুন সংযুক্ত ‘শাপলা কলিকে’ দলীয় প্রতীক হিসেবে নিতে রাজি হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে চার মাস ৯ দিন ধরে এনসিপির সঙ্গে টানাপড়েন চলছিল নির্বাচন কমিশনের। সম্প্রতি ইসি প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করে। তবে এনসিপি তিনটি প্রতীক চেয়ে নতুনভাবে আবেদন করেছিল।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, শাপলা, সাদা শাপলা ও শাপলা কলি দলের প্রতীক চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি। শাপলা কলি দেওয়া হলে এনসিপি নেবে।
তৃণমূল কলিকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আসন্ন নির্বাচনে জোট গঠন নিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যদি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি গডফাদারদের রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারে, তাহলে আমরা জোটে যাব।’
এ সময় নির্বাচনের দিন বা তার আগে যখনই হোক না কেন, গণভোট যেন সুষ্ঠু হয়- এই দাবি জানান এনসিপি নেতা।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা শাপলা কলি নেব। এখন এখানে আপনাদের একটা বিষয় থাকতে পারে, শাপলা নিয়ে কিন্তু আমরা এখনো ব্যাখ্যা পাইনি। নির্বাচন কমিশনের যে স্বেচ্ছাচারী আচরণ, কিন্তু এখন কি তাইলে আমরা প্রতীক নিয়ে পড়ে থাকব? আমরা কি ইলেকশন ফেজে (পর্যায়ে) ঢুকব না? তো সে জন্য আমরা বৃহত্তর স্বার্থটা চিন্তা করেই এই ডিসিশনটা (সিদ্ধান্ত) নিচ্ছি।’
শাপলা কলি প্রতীক নিয়েও দেশজুড়ে এনসিপি ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বলে দাবি করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমরা শাপলা কলি নিয়েও কিছু পজিটিভ সাড়া পেয়েছি। এটা শাপলার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে শাপলা কলি হয়েছে। অর্থাৎ শাপলাও আছে, কলিও আছে। সে জায়গায় নির্বাচন কমিশন আমরা যতটুকু চিন্তা করেছি, তারা একধাপ একটু বাড়িয়ে চিন্তা করে সেখানে কলি ও শাপলা যুক্ত করেছে।’
এনসিপি নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জানিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়ে তাঁদের অফিসে এলে তাঁরা সেটা বিবেচনা করবেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, সকালে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পারেন, একটি নির্দিষ্ট দলের মনোনয়নের জন্য তাঁর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে দেশে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়েছে। আর বিএনপির নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস হচ্ছে।’
আস্থার প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনকে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন’ বলে মন্তব্য করেন এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘এখনো নির্বাচন কমিশনকে যদি সংক্ষিপ্ত ওয়ার্ডে বলতে বলেন, আমরা এটাকে নির্বাচন কমিশন বলতে পারি না। এটাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশন বলতে পারি আমরা। এই ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশনে এসেছি আমরা, এখানে অনেক কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে। সো ইঞ্জিনিয়ারিং কমিশনে আমরা আমাদের ফাইটটা করে যাচ্ছি।’
ভবিষ্যতেও নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন যাতে দ্রুততম সময়ে এনসিপির নিবন্ধনসংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন, সেই আহ্বান জানিয়েছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এনসিপি নেতা জহিরুল ইসলাম মুসা তাদের প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা, সাদা শাপলা এবং শাপলা কলি’ বেছে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, শাপলা, সাদা শাপলা ও শাপলা কলি এখন আমাদের পছন্দ। এর জন্য আমরা আবেদন করেছি। এনসিপির প্রতীক শাপলা কলি বিবেচনায় নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঙ্গে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পলিসি ও রিসার্চ লিড খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রকাশিত তালিকায় নতুন প্রতীকটি ১০২ নম্বরে যুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে প্রকাশিত গেজেটে স্বাক্ষর করেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
এর আগে ১১৫টি প্রতীকের তালিকা করেছিল ইসি। সংশোধিত তালিকায় ১১৯টি প্রতীক রাখা হয়েছে। এ তালিকার ১০২ নম্বরে ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করেছে ইসি।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘১৯৭২-এর সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন, ‘‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮’’-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘উপরিউক্ত বিধিমালার বিধি ৯-এর উপবিধি (১)-এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপবিধি (১) প্রতিস্থাপিত হইবে। এই বিধির অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অনুচ্ছেদ ২০-এর দফা (১)-এর অধীন স্থগিতকৃত প্রতীক ব্যতীত নিম্নবর্ণিত প্রতীকগুলো হইতে প্রাপ্যতা সাপেক্ষে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাইবে।’
