বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৩০

ফরিদপুর প্রতিনিধি

বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। আহতদের মধ্যে আছেন- বোয়ালমারী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মিনহাজুর রহমান লিপনসহ (৫০), রফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং লিয়াকত মোল্লা (৫০)

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে বোয়ালমারী বাজারের অবদার মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে।

সংঘর্ষের পর তাদের তিনজনকে বোয়ালমারী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুর হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) আসনের দুই মনোনয়নপ্রার্থী দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক বিএনপি সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু।

সোমবার বিএনপি ২৩৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও এই আসনটির মনোনয়ন স্থগিত রেখেছে।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে উভয় পক্ষই বোয়ালমারী বাজারে পৃথকভাবে কর্মসূচি আহ্বান করে। দুপক্ষের লোকজন বোয়ালমারী বাজারে জড়ো হতে থাকলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন পক্ষের শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে বোয়ালমারী বাজারের ওয়াপদা এলাকায় শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু সমর্থিত বিএনপি অফিসে হামলা চালায়। এ সময় তারা অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপাশি আশপাশের অন্তত আট থেকে ১০টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং অন্তত আট থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বোয়ালমারীসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ ধ্বংসযজ্ঞ চলে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও বিক্ষুব্ধদের মুখে পড়ে ফিরে যান। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুপক্ষের আলাদা আলাদা কর্মসূচি ছিল। একপক্ষ সকালে এবং অন্যপক্ষ বিকেলে র‌্যালি করার কথা ছিল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। ঝুনুর লোকজন পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করেছে।

উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগ করে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে উপজেলা বিএনপি’র মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়। এ সময় আমাদের প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেল আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের পার্টি অফিসেও ভাঙচুর চালায় তারা। এ সময় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির চৌধুরী বলেন, র‌্যালি শেষ করে অফিসে অবস্থান আমরা করছিলাম। এসময় নাসিরুল ইসলামের লোকজন এ হামলা চালায়। এ হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা বলেন, ঝুনু গ্রুপের কর্মসূচি সকাল দশটার সময় ঘোষণা দেওয়া ছিল। আমরা এ কারণেই বিকালে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিলাম। তারা সে কর্মসূচি থেকে সরে এসে বিকেলের আমাদের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। আমাদের নেতাকর্মীদের মেরে আহত করে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। কমিটিগুলোয় একচ্ছত্র আধিপত্য নাসিরুল ইসলামের সমর্থকদের। শামসুদ্দিন ঝুনুর হাতেগোনা দুয়েকজন কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। এর পর থেকেই দুই পক্ষের বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন শামসুদ্দিন ঝুনুর অনুসারীরা। তবে এতদিন অন্যপক্ষের কোনো তৎপরতা ছিল না। শুক্রবারই প্রথমবারের মতো সংঘর্ষে জড়ালো পক্ষদুটি।

সংঘর্ষের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সাতৈর বাজারের অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন তার পক্ষের নেতাকর্মীরা। এতে উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, আজ আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। আমাদের প্রতিপক্ষ ঝুনু গ্রুপ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ৭ নভেম্বর উপলক্ষে তাদের কর্মসূচি ছিল সকালে আর আমাদের ছিল বিকেলে। কিন্তু তারা হঠাৎ সময় পরিবর্তন করে কর্মসূচি বিকেলে নিয়ে আসে। উপজেলার বাইরে থেকে লোকজন ভাড়া করে এনে আমাদের উপর হামলা করে। এতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মিছিল থেকে জয় বাংলা এবং নারায়ে তাকবির শ্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার চাই। দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শেখ, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হোসেনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *