■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
আন্দোলন চলাকালীন শনিবার (৮ নভেম্বর) পুলিশের হামলায় পাঁচজন শিক্ষক গ্রেফতার ও ১২০ জন আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মো. মাহবুবুর রহমানসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও চলমান থাকবে।’
এর আগে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের শাহবাগ অভিমুখী পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তারা।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। অনেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে। আবার কিছু শিক্ষক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষকরা যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দেয়। তারা সেটা ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই-একজনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকদের একটি দল শাহবাগ এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা ও বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকদের একটি দল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিল। বিকেল আনুমানিক ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের কিছু সদস্য কলম সমর্পণের নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ডিএমপির তথ্যমতে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশি নির্দেশনা অমান্যকারী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তী সময়ে কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করা হয়। এরপর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বর্ণিত এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য সবাইকে পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
এর আগে সকালে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।
শিক্ষকরা বলেন, ‘মানুষ গড়ার কারিগরদের তৃতীয় শ্রেণিতে রেখে উন্নত জাতি গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পদোন্নতির যোগ্যতা থাকার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে সারা জীবন এক পদে আটকে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে দাবি পূরণ না হলে পর্যায়ক্রমে কর্মবিরতিসহ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো— সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম এবং ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
অন্যদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
